
খাস খবর ডেস্ক : একটি কথা বারবার শোনা যায়, ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। এই কথাটি বর্তমানের বাংলার রাজনীতির (Didir Jamana) জন্য আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক। ১৬ অগাস্ট শহরে একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দুয়ারে পোস্টার পড়ল ‘আগামী ছয় মাসে আসছে নতুন তৃণমূল, যেমন মানুষ চায়”। পোস্টারের কোথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নেই, শুধু ছবি আছে একজনের তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এরপর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব শুরু হল? মানুষ যা চায় বলার মানে কি বর্তমান তৃণমূলকে মানুষ চাইছেনা?
অধুনা অনেকের প্রশ্ন করার অভ্যাস খানিক কমলেও এই বিষয়ে বিস্তর প্রশ্ন জমা হতে থাকে পাড়ার হারুদার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সকালের দুধের ডিপোর লাইনে। বিশেষ করে প্রশ্ন আরও ওঠে যখন দেখা যায় অন্য কোথাও প্রথমে পোস্টার পড়ল না, শুধুমাত্র তা দেখা গেল কালীঘাট ভবানীপুর অঞ্চলে। এরপর থেকে জেলায় জেলায় এমন পোস্টার লক্ষ করা গেল, এর থেকেই বোঝা যায় এই পোস্টার দেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পিত। এবার ভাবছেন তো এর কারণ কি? আসলে এটি পুরনো কৌশল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মানুষের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই রকম কৌশল অবলম্বন করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলি। যখন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে, গরু পাচার, কয়লা পাচার একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত রাজ্যের শাসক দল, যখন রাস্তায় বিরোধীরা নচিকেতার গানের মতো চিৎকার করে বলছে, চোর চোর, তখন এহেন কৌশল নেওয়া ছাড়া কি তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কি আর কিছু করার ছিল? বিষয়টি হল টেলিভিশনের দুটি দিকেই শুধু একটি দলই থাকবে। যে বিরোধী, সেই শাসক এমন মনোভাব, যাতে কোনও ভাবে বিরোধীরা রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক না হতে পারে। অনেকটা এরকম আপনি তাঁকে পছন্দ করতে পারেন বা অপছন্দ করতে পারেন, কিন্তু তাঁকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। অর্থাৎ শাসক চায়, আপনি সমালোচনা করুন বা প্রশংসা করুন দুটি ভূমিকাই শুধু সে পালন করবে।
শোনা যায় গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল দল পরিচালনা হয় আইপ্যাক দ্বারা, এবার স্বাভাবিকভাবে আইপ্যাক বিজ্ঞাপনের মন্ত্র খুব ভাল বুঝবে সেটাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এক ব্যক্তির মতে, আসলে কোনও কোম্পানির জনপ্রিয় পণ্য যখন তার জনপ্রিয়তা হারায় তখন সেটিকে নতুন মোড়কে নতুন নামে ফের জনগণের কাছে তুলে ধরা হয় এবং জনগণও নতুন প্যাকেট দেখে আবার সেই পণ্য কিনতে শুরু করে, কিন্তু আসলে পণ্যটির মৌলিক কোনও পরিবর্তন হয় না। বর্তমানের রাজনৈতিক দলগুলিও হয়তো এখন সেই বিজ্ঞাপনী কৌশল অবলম্বন করে আশ্রয় খুঁজছে জনতার আদালতে টিকে থাকার জন্য। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই বিজ্ঞাপনী কৌশলের আশ্রয় নিতে হয় রাজনৈতিক দলকে তবে তা দুর্ভাগ্যজনক, যেখানে রাজনৈতিক দল পণ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন : দিদির জমানা: ‘উনি চিলি চিকেন খেতে ভালোবাসেন কিন্তু মুরগি মারার বিরোধী’
এরকম কিছু পোস্টার দিয়ে মানুষের আলোচনার চর্চার বিষয়বস্তু বদলের চেষ্টা চালায় শাসক। তবে ওই যে প্রথমে বললাম ইতিহাস ফিরে আসে, অর্থাৎ এহেন বিষয় বাংলায় নতুন নয়। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন কংরেস-তৃণমূল একজোট হচ্ছে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে, ঠিক তার কয়েকমাস আগেই বিপদ বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী পদে নতুন মুখ নিয়ে আসল বামফ্রন্ট। পাম এভিনিউ নিবাসী সুকান্ত ভট্টাচার্যর ভ্রাতুস্পুত্র বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সামনে এনে কার্যত বিরোধীদের সমস্ত হিসেব ওলটপালট করে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাম বিরোধী হাওয়া যে তীব্র হয়েছিল তা কিছুটা হলেও বোঝা গিয়েছিল নির্বাচনী ফলাফলে। বামফ্রন্ট ৩৪ বছরের শাসনে কেবলমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচনেই ২০০ এর কম আসন পেয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সিপিএম জিতেছিল নয়া নেতৃত্বকে সামনে এনে। এই ঘটনাটি ঘটানোর পিছনে যার বিশেষ ভূমিকা ছিল, তিনি অধুনা বঙ্গ রাজনীতির পরিচিত কোনও ‘চাণক্য’ নন, তিনি অনিল বিশ্বাস, সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক। আসলে অনিল বাবু যে সময় রাজনীতি করতেন সেই সময়ে ‘চাণক্য সংস্কৃতির আগমন ঘটেনি, যারা একটু বাংলার রাজনীতি নিয়ে চর্চা করেন, তারা এখনও বলেন, সিপিএমের একজন অনিল বিশ্বাস ছিলেন। সেই যুগে কোনও আইপ্যাক ছিল না।
আরও পড়ুন : দিদির জমানা : বাংলায় বনধের সংস্কৃতি তো আজ অতীত, শিল্প ক’টা এল
বামফ্রন্ট স্লোগান দিয়েছিল উন্নততর বামফ্রন্টের, বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্ট। এটাও শাসকের একটি প্রবণতা সে নিজের বিকল্প শক্তিও নিজের মধ্যেই খুঁজে পায়, ভারী মজার বিষয়। যদি এই যুক্তি ধরে নেওয়াও হয় যে নতুন তৃণমূল আসবে বা আসছে, তাহলে তো আরও একটি প্রশ্ন উঠবে, যাকে সামনে রেখে নতুন তৃণমূলের কথা বলা হচ্ছে, তিনিই তো কলকাতা পুরভোটের সময়ে বলেছিলেন, যে আগে যা হয়েছে হয়েছে এবার কোনও গা জোয়ারি হবে না। কিন্তু বাস্তবে পুরভোটের দিনে দেখা গেল সেই চেনা ছবি, সকাল থেকে বিরোধী পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে সিসিটিভির মুখ ঘুরিয়ে দেদার ছাপ্পা চলল দিনভর। এরপরে সাধারণ মানুষকে শান্তির ভোট হবে এমন আশ্বাস দেওয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? উত্তরের খোঁজ চলছে!
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এহেন কৌশলের মাধ্যমে দেখান হয় দল খারাপ হলেও কোনও এক ব্যক্তি ভাল, তাই দেখে ভোট দেওয়া হোক (Didir Jamana) এবং এই কথায় ভরসা করে মানুষও ভোট দিয়ে দেয়। তৃণমূল এই বিষয়ে অভ্যস্ত, কারণ মুখ্যমন্ত্রী বারবারই বলেন, কাউকে দেখে নাও শুধুমাত্র তাঁকে দেখে ভোট দিতে। তবে প্রশ্ন উঠছে একই ওষুধে সবসময় রোগ নিরাময় হয় কি? প্রশ্নটা থাকল