সুমন বটব্যাল: অবশেষে দাবি মিটেছে এলাকাবাসীর৷ মিটিয়েছেন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সরকার৷ হলদিবাড়ি- মেখলিগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া তিস্তার ওপর পাঁচশো কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠেছে ‘জয়ী সেতু’৷ সোমবার উত্তরবঙ্গ থেকে সেতু উদ্বোধনের পর স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর মুখের হাসিও চওড়া হয়েছে৷ কিন্তু এলাকায় শাসকদলের স্থানীয় অভিভাবক যারা, তাঁদের মুখে হাসি ফোটাবেন কে? লাখ টাকার এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে মেখলিগঞ্জে৷
কারণ, প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সকলেই এক পা এগিয়ে৷ এ বলে আমায় দ্যাখ, তো ও বলে আমায়! বঙ্গে ভোট নামক রাজনৈতিক উৎসব হাজির হলে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ের ছবিটা কমবেশি সর্বত্রই দেখা যায়৷ কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের চিত্রটা যেন একটু বেশি জটিল৷ সেটা জানতে হলে ফিরে যেত হবে ফ্ল্যাশব্যাকে:
পালা বদলের পাঁচ বছর পরের ঘটনা৷ মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের অন্দরে জোর চর্চা চলছে, ব্লক সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকার নাকি দক্ষ সংগঠক সুনীল রায়- কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে? কিন্তু ২০১৬-র সেই নির্বাচনে ৩৬জি তপসিয়া রোড থেকে যখন ফাইনাল লিস্ট সামনে আনা হল তখন মেখলিগঞ্জ তৃণমূলের হালটা অনেকটা লাস্ট মিনিট সাজেশন ডাঁহা ফেল করার মতোই৷ দলের প্রাক্তন সাংসদ অমর রায় প্রধানের ছেলে তথা তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানকে করা হল প্রার্থী৷ যোগ্য মর্যাদা না পেয়ে ভোটের মুখেই পত্রপাঠ গেরুয়া নামাবলী গায়ে চড়ালেন দক্ষ সংগঠক সুনীলবাবু৷
লক্ষ্মীকান্তবাবু আশায় রইলেন, এবারে হয়নি পরের বারে নিশ্চয়ই হবে৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি! লোকসভা ভোটের মুখে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে দিদিমণির মতাদর্শে নাম লেখালেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। উপহারও মিললো হাতে গরম, কোচবিহার লোকসভা ( মেখলিগঞ্জ অর্ন্তভুক্ত) আসন থেকে টিকিট পেলেন তিনি৷
এলাকায় কান পাতলে আজও শুনতে পাওয়া যায়, প্রার্থী না হতে পারা নিয়ে হাজারো দলীয় কেচ্ছার কহানি৷ যেমন, ২০১৬-র নির্বাচনের মুখে দলীয় প্রার্থীকে মারধরে নাম জড়ায় ব্লক সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকারের৷ পাল্টা হিসেবে ভোট মেটার পর অর্ঘ্য অনুগামীদের হাতে চুরিকাহত হন লক্ষ্মীকান্তুবাবু৷ দলের গ্রামীণ ব্লক সভাপতি থেকে সরিয়ে লক্ষ্মীকে করা হয় শহর সভাপতি৷ আর তাঁর জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় উদয় বর্মনকে৷
একুশের নির্বাচনে ঘাসফুলের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে অর্ঘ্য রায় প্রধান, লক্ষ্মীকান্ত সরকার এবং পরেশ অধিকারী- তিনজনেই রয়েছেন৷ আসনটি এসসির জন্য সংরক্ষিত এবং তিনজনেই সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত৷ ফলে টিকিট পাওয়া, না-পাওয়া নিয়ে দন্ত বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি অর্ন্তঘাতের সম্ভবনাও অবধারিত৷ বাড়তি বিড়ম্বনা হিসেবে রয়েছে এলাকায় পদ্মফুলের দাপাদাপি৷ সবমিলিয়ে ফেব্রুয়ারির কমকনে ঠাণ্ডাতেও ফুটছে মেখলিগঞ্জে শাসকের অন্দরের আলোচনা৷ সংঘাত এড়াতে তবে কি নতুন কোনও মুখ? ফলাফল জানতে আপাতত, তপসিয়া রোডের ফাইনাল তালিকার দিকেই তাকিয়ে আস্ত গঞ্জটা৷