বিশ্বদীপ ব্যানার্জিঃ জগন্নাথের হাত নেই, একথা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কেন হাত নেই জগন্নাথের? এ বিষয়ে সবথেকে প্রচলিত যে কাহিনী তা হল, জগন্নাথের মূর্তি তৈরী করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। আর তিনি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে শর্ত দিয়েছিলেন তাঁর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে। রাজা সেই শর্তটি ভঙ্গ করলে মূর্তির কাজ অসমাপ্ত রেখেই অন্তর্হিত হন বিশ্বকর্মা।
আরও পড়ুন: রক্তমাংসের মানুষ তো নন, তবে কেন জ্বরে পড়েন জগন্নাথদেব
কিন্তু জগন্নাথের হাত না থাকার নেপথ্যে একমাত্র কারণ কি এটিই? নাঃ, শাস্ত্র একেবারেই অন্য একটি ব্যখ্যা দেয়। জগন্নাথ হলেন, জগত-পালক বিষ্ণুর একটি রূপ। যাঁকে বৈষ্ণব ধর্মমতে সর্বোচ্চ ঈশ্বরও মনে করা হয়। এ কারণেই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, জগন্নাথের কোনও হাত না থাকাই স্বাভাবিক। কারণ, হাত থাকলেই, তার একটা সীমা থাকবে। জগন্নাথের যেহেতু হাত নেই, তাই হাতের সীমা থাকার প্রশ্নও নেই। তিনি অসীম, গোটা জগত-সংসারটাই তাঁর হাতে। জানলে অবাক হবেন, জগন্নাথ তাই স্বয়ং-ই এহেন হাত-পাবিহীন রূপে অধিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, জগন্নাথ নিজে-ই।
এতেই শেষ নয়। শাস্ত্র বাদ দিলে পুরাণের একটি কাহিনীও রয়েছে জগন্নাথের হাত না থাকার নেপথ্যে। কথিত রয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে চলে আসার পর শোকেদুঃখে একেবারে পাথর হয়ে গিয়েছিল বৃন্দাবনবাসী। যে কাহিনী বলরামের মাতা রোহিণীদেবী একদিন তাঁর মেয়ে সুভদ্রাকে শোনাচ্ছিলেন। শুনতে শুনতে বৃন্দাবনবাসীর দুঃখে চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায় সুভদ্রা’র। সেইসঙ্গে হাত-পাও সেঁধিয়ে যায় পেটের ভিতর।
কিন্তু শুধু সুভদ্রাই নন, শ্রীকৃষ্ণ এবং দাদা বলরাম-ও দরজার বাইরে থেকে রোহিণীদেবীর গল্প শুনছিলেন। তাঁরাও মা যশোদা, বাবা নন্দ এবং বাকি বৃন্দাবনবাসীদের ছেড়ে আসার তীব্র অনুতাপে ভুগতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে তাঁদেরও সুভদ্রার মত একই অবস্থা হয়। হাত-পা পেটে ঢুকে যায়। দুই চক্ষু বিস্ফারিত। শ্রীকৃষ্ণের এই রূপই পরবর্তী সময়ে জগন্নাথ নামে খ্যাত হল।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/5eGwbh7XqkKR1mRr/?mibextid=qi2Omg
অবশ্য জগন্নাথের যে হাত-পা একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়। জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তাঁর আরাধ্য দেবতার হাত-পা নেই বলে দুঃখ প্রকাশ করতে লাগেন। এসময় প্রভু জগন্নাথ স্বপ্নাদেশে বলেন, রাজার অনুরোধ রাখতে বছরের বিশেষ কয়েকটি দিনে অস্থায়ী সোনার হাত-পা শরীরে লাগাবেন তিনি। সেই থেকেই নির্দিষ্ট কিছু তিথিতে জগন্নাথদেবের দারুকাষ্ঠের দেহে সোনার হাত-পা যুক্ত করা হয় পুরীতে।