বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: ভারতবর্ষের অনেক স্থানেই পূজিত হন খাটুশ্যাম। এই বাংলাতেই তাঁর একাধিক মন্দির রয়েছে। কিন্তু আসলে কে ছিলেন এই খাটুশ্যাম? কী কারণে তিনি পুজো পেয়ে থাকেন?
আরও পড়ুন: স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা রামচন্দ্র নদীতে নেমে তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি
খাটুশ্যামের আসল নাম, বারবারিক। তিনি ছিলেন ভীমপুত্র ঘটোৎকচের পুত্র। অন্যদিকে বারবারিক ছিলেন এক পরম শিবভক্ত। মহাদেব তাঁকে বর দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর ‘তিন তীর’ দিয়েই বিশ্ব জয় করতে পারবেন। এই তীরগুলি ছিল, অদ্ভুত। প্রথম তীরটি দিয়ে বারবারিক যা যা ধ্বংস করতে চান সেগুলি চিহ্নিত করতে পারতেন। দ্বিতীয় তীর দিয়ে বারবারিক যাকে যাকে বাঁচাতে চান তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারতেন। আর তৃতীয় তীরটি দিয়ে প্রথম তীর দ্বারা সকল বস্তু ধ্বংস করতে পারতেন।
অতঃপর এই তিন তীর নিয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে লড়তে উদ্যোগী হন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ অচিরেই বুঝেছিলেন, বারবারিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ কোনও পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ লড়তে যখন যাচ্ছেন বারবারিক, শ্রীকৃষ্ণ এক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে তাঁর পথ আগলে দাঁড়ান। আর জিজ্ঞেস করেন, বারবারিক কার পক্ষে লড়বেন।
বারবারিক জানান, তাঁর মা তাঁকে দুর্বলদের পাশে থেকেই লড়াই করতে বলেছিলেন। তাই পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধ করবেন তিনি। এ কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করলেন, যুদ্ধে যদি কৌরবরা দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে কী করবেন বারবারিক। বারবারিক বলেন, তিনি তখন পক্ষ বদলে কৌরবদের হয়েই লড়বেন। এভাবে কিছুক্ষণ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার পর কৃষ্ণ বুঝতে পারেন, বারবারিক যদি যুদ্ধ করেন তাহলে শেষে তিনিই শুধু বেঁচে থাকবেন। আর কেউ নয়।
তাই এরপর কৃষ্ণ ভিক্ষা হিসেবে বারবারিকের মস্তক চান। এবারে বারবারিক বুঝতে পারেন যে এই ব্রাহ্মণ সাধারণ কেউ নন। তিনি সে কৌতুহল ব্যক্ত করলে কৃষ্ণ নিজরূপ ধারণ করেন। আর তারপর বারবারিক তারপর কৃষ্ণকে নিজের মস্তক কেটে নিবেদন করেন।
তবে মস্তক নিবেদন করলেও বারবারিক শর্ত দিয়েছিলেন। তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখতে চান। ফলে শ্রীকৃষ্ণ বারবারিকের মস্তক একটি উঁচু ঢিবির ওপর রাখেন। যাতে বারবারিক অনায়াসে যুদ্ধ দেখতে পান। এরপর যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে পাণ্ডবরা নিজেদের মধ্যে তর্ক করছিলেন। যুদ্ধ জয়ের সবথেকে বড় কারণ কী? তখন বারবারিকের মস্তক উত্তর দেয়, শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের পক্ষে ছিলেন বলেই তাঁরা জিততে পেরেছেন।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
শ্রীকৃষ্ণ বারবারিককে বর দিয়েছিলেন যে তিনি কলিযুগে খাটুশ্যাম নামে পূজিত হবেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “তোমার পুজো আমি আমার নিজের পুজো বলেই গ্রহণ করব।” রাজস্থানের সিকারে খাটুশ্যামজির বড় মন্দির রয়েছে।