বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: তুলসী পাতা বিনা নারায়ণ পুজো অসম্পূর্ণ। যা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু কেন তুলসীপাতা ছাড়া নারায়ণ পুজো করা যায় না? মূলতঃ দুটি পুরাণে বিষয়টি উল্লেখিত। এই দুই পুরাণ যথাক্রমে পদ্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে।
প্রথমে চোখ রাখা যাক পদ্মপুরাণে। এই পুরাণ বলে, জলন্ধর নামক এক অসুরের দৌরাত্ম্যে নাভিশ্বাস উঠেছিল সকল দেবতার। কিন্তু তাঁকে বধ করা কারওর পক্ষেই সম্ভব ছিল না। কারণ, অসুর জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দা ছিলেন একজন পরম সতী। আর অসুরের ওপর বর ছিল, যতদিন তাঁর স্ত্রীর এই সতীত্ব বজায় থাকবে, ততদিনই জীবিত থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রতিবছর ১৭ সেপ্টেম্বর-ই পড়ে বিশ্বকর্মা পুজো, নেপথ্যে যে রহস্য
উপায় না দেখে ছলনার আশ্রয় নিলেন হরি। যিনি আবার ছিলেন বৃন্দা দেবীর আরাধ্য। জলন্ধরের অনুপস্থিতিতে হরি তাঁরই রূপ ধারণ করে বৃন্দা দেবীর কাছে পৌঁছন, এবং তাঁর সতীত্ব হরণ করেন। সেই ফাঁকে মহাদেবও বধ করেন জলন্ধরকে।
ক্রমে সবটা জানতে পারলেন বৃন্দা দেবী। দ্রুত নিজের প্রাণ বিসর্জনে ব্রতী হন। কিন্তু তারও আগে ক্রুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে শাপ দেন, বিষ্ণু পাষাণ অর্থাৎ পাথরে পরিণত হবেন। সেই বিশেষ ধরণের শিলা পাথরই হল শালিগ্রাম বা শালগ্রাম শিলা। যা মূলতঃ উত্তর ভারতের গন্ডকী নদীর ধারেই পাওয়া যায়। কারণ, শাপগ্রস্ত হয়েও বিষ্ণু তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত বৃন্দাকে বর দেন, মৃত্যুর পর বৃন্দার দেহ গন্ডকী নদী এবং কেশ অর্থাৎ চুল তুলসী গাছে পরিণত হবে। আর শালগ্রাম শিলার সঙ্গে এ দুয়ের মিলন হবে অবিচ্ছেদ্য। বিশেষ করে, তুলসীপাতা ভিন্ন শালগ্রাম শিলা পুজো কখনওই সম্পন্ন হবে না। কথিত, শালগ্রাম এবং তুলসী রূপে বিবাহ হয় বিষ্ণু এবং তুলসী দেবীর।
এদিকে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ হল, রাধাসর্বস্ব পুরাণ। তাই সেখানে একটু অন্য কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। গোলকে বৃন্দা দেবী একবার শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ক্রীড়ায় মত্ত হয়েছিলেন। আর তা দেখে চূড়ান্ত ক্রুদ্ধ হন শ্রীরাধিকা। তিনি বৃন্দাকে মর্ত্যে মানবশরীরে জন্ম নেওয়ার অভিশাপ দেন। তাতে প্রজাপতি ব্রহ্মার মায়া হল। তিনি বৃন্দাকে বলেন, কোনও চিন্তা নেই। মর্ত্যে গিয়েও তিনি কৃষ্ণকে পাবেন। প্রথমে কৃষ্ণেরই এক অংশ সুদামের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। এরপর সুদামের মৃত্যু হলে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন বৃন্দা।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
এদিকে সুদামকে-ও অন্য এক কারণে শাপ দিয়েছেন রাধিকা। তার ফলে সুদাম দানবগৃহে শঙ্খচূড় নামে জন্ম নেন। অন্যদিকে বৃন্দা রাজা ধর্মর্ধ্বজ এবং তাঁর স্ত্রী মাধবীর ঘরে তাঁদের কন্যারূপে জন্ম নেন। বাকি বৃত্তান্ত পদ্মপুরাণের অনুরূপ। বৃন্দা দেবীর নাম থেকেই শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকার লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন নামে পরিচিত। কারণ ব্রহ্মা বর দিয়েছিলেন, সুদামের মৃত্যুর পর বৃন্দা স্বয়ং কৃষ্ণকে-ই পাবেন। সে হেতুই স্থানটিতে তুলসী পাতার আধিক্য ছিল। সেই থেকেই স্থানটির নাম বৃন্দাবন হয়। আর তুলসীও মিলিত হন তাঁর আরাধ্যের সঙ্গে।