খাস খবর ডেস্ক: সন্তান উৎপাদনের দেবতা/দেবী হলেন মা ষষ্ঠী। কিন্তু রাঢ়-বঙ্গের মূলতঃ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলী, কলকাতা, বর্ধমান, নদিয়া এবং বাঁকুড়ায় আরও এক দেবতা পূজিত হয়ে থাকেন। পঞ্চানন বা পঞ্চানন্দ বা পাঁচু ঠাকুর। এই লৌকিক দেবতাটি-কেও শস্যদাতা এবং সন্তানদাতা মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: সংক্রমণের দেবী “মহামারী”, নিশুতি রাতে আজও পূজিতা হন মল্লভূমের গুপ্ত কুঠুরিতে
আসলে ইনি কে? দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে পাঁচু ঠাকুরের দেহাকৃতি এবং বেশভূষায় মিল রয়েছে। লাল গাত্রবর্ণ, গোলাকার তথা ক্রোধান্বিত তিনটি চোখ, টিকালো নাক। এরই সঙ্গে মানানসই পিঙ্গল জটা, দাড়ি নেই কিন্তু প্রায় আকর্ণবিস্তৃত গোঁফ। ওদিকে পরনে বাঘছাল, গলায় শিবের-ই মত সাপ জড়ানো, এছাড়া পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ-ও। কানে ধুতুরা ফুল গোঁজা, সঙ্গে থাকে ত্রিশূল, ডম্বরু আর গাঁজার কলকে।
সব মিলিয়ে পঞ্চাননকে শিবের-ই এক লৌকিক রূপ মনে করা হয়। যিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণার কিছু কিছু এলাকায় “বাবাঠাকুর” নামে পরিচিত। আবার কারও কারও মতে, পাঁচু ঠাকুর শিব নন। শিবের পুত্র তিনি। অনেকটা দক্ষযজ্ঞকালে জন্ম নেওয়া বীরভদ্রের মত।
পঞ্চানন ঠাকুরের সঙ্গে থাকেন তাঁর দুই অনুচর। ধনুষ্টংকার এবং জরাসুর নামক দুই অপদেবতা। এছাড়া থাকে ভূত-প্রেত, ঘোড়া ইত্যাদি পশু। যা দেখে কিন্তু “বাবাঠাকুর”কে শিব ভাবতেই ইচ্ছা করে। মনে পড়ে শিবের দুই বিশেষ রূপ— ভূতনাথ এবং পশুপতি। এছাড়া আরও একটি তত্ত্ব বিদ্যমান। রাঢ় বাংলার অন্যতম প্রাচীন তথা জনপ্রিয় লৌকিক দেবতা “ধর্মঠাকুর”। ঐতিহাসিকদের দাবী, তিনি-ই এই পঞ্চানন রূপের মাধ্যমে আর্যদেবতা শিবের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।
শনি এবং মঙ্গলবারে পাঁচু ঠাকুর পূজিত হয়ে থাকেন। মন্দির কিংবা গাছতলায় ঘটের পাশাপাশি তাঁর মূর্তি এবং প্রতীক পূজা করারও প্রচলন রয়েছে। এ সময় তাঁর উদ্দেশ্যে ছাগবলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। মনে করা হয়, পঞ্চানন তুষ্ট হলে ধনুষ্টংকার রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করেন। এছাড়া প্রসূতি মায়ের গর্ভস্থ ভ্রূণ রক্ষা করার দায়িত্বও তাঁর।
আরও পড়ুন: কুন্তীর আদেশে নয়, দেবাদিদেব মহাদেবের জন্যই পঞ্চপতি লাভ করেন দ্রৌপদী
মধ্যযুগের বেশ কয়েকটি মঙ্গলকাব্যে-ও পাঁচু ঠাকুরের উল্লেখ রয়েছে। দ্বিজ দুর্গারাম রচিত “পঞ্চাননমঙ্গল” যার অন্যতম। এই কাব্য পড়লেও পঞ্চাননকে শিব ভাবতে ইচ্ছে করবে। এর সঙ্গীতাংশে রয়েছে— “পঞ্চমুখে গান কর ত্রিলোচন।” এছাড়া “তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব” নামক কাব্যেও আমরা পঞ্চানন-কে পেয়ে যাই। “পঞ্চানন দেব প্রায় অশ্বত্থ তলায়।/ মধ্যমাঠে সরোবর তীর দেখা যায়॥” রূপারাম রচিত “ধর্মমঙ্গলে”ও পঞ্চাননে’র উল্লেখ আছে।