বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: শাস্ত্রমতে, প্রতিটি অমাবস্যাই কালীপুজোর জন্য প্রশস্ত তিথি। তবে ভাদ্র মাসের অমাবস্যার মাহাত্ম্য বাকি সব অমাবস্যার থেকে একটু হলেও আলাদা। এই তিথিতেই শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার উদ্দেশ্যে মহামায়া পার্বতীর দেহের কোষিকা অর্থাৎ কোষ থেকে কৌশিকী দেবীর উৎপত্তি ঘটেছিল। আর সে কারণেই তিথিটির নাম কৌশিকী অমাবস্যা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রীকৃষ্ণের নামে নামকরণ, রাধাবল্লভী এসেছে চৈতন্য মহাপ্রভুর হাত ধরে?
মার্কণ্ডেয় পুরাণে‘র অন্তর্গত দেবীমাহাত্ম্যম বা শ্রীশ্রী চন্ডী গ্রন্থে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, দক্ষযজ্ঞের অগ্নিতে দেবী সতী আত্মাহুতি দেওয়ায় পরজন্মে তিনি অর্থাৎ পার্বতী কালো মেঘের ন্যায় শ্যামবর্ণা হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ফলে স্বামী মহাদেব আড়ালে মাঝেমধ্যে ‘কালী’ বা ‘কালিকা’ নামে সম্বোধন করতেন। এদিকে শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক অসুরভাইদের কর্তৃক পরাজিত ও বিতাড়িত হয়ে দেবগণ যখন মহেশ্বরের শরণ নেন, তিনি পার্বতীকে বলেন, “হে কালী, তুমিই জগতকে রক্ষা করো।”
সমস্ত দেবতার সন্মুখে ‘কালী’ ডাক শুনে চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করে ক্রোধিত হন দেবী পার্বতী। ফলস্বরূপ, মানস সরোবরের তীরে গিয়ে তপস্যা শুরু করেন। দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের অমাবস্যা। তপস্যা শেষে শীতল জলে স্নানের মাধ্যমে দেহের সকল কালিমা ত্যাগ করে পূর্ণচন্দ্রের মতো বর্ণ ধারণ করলেন। কালী থেকে গৌরী হলেন তিনি।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
অন্যদিকে, দেবীর পরিত্যক্ত কালো কোষগুলি থেকে সৃষ্ট হন ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণা দেবী কৌশিকী। মহামায়ার নির্দেশে ইনিই শুম্ভ-নিশুম্ভের বিনাশ ঘটান। আসলে এর নেপথ্যেও ছিল এক গূঢ় রহস্য। অসুর ভ্রাতৃদ্বয়কে ব্রহ্মা বর দিয়েছিলেন, কেবলমাত্র অ-যোনী জাত নারী অর্থাৎ মাতৃগর্ভ হতে যার জন্ম নয়, এমন নারী ব্যতীত কেউই তাদের বধ করতে পারবে না।
মূলতঃ এ কারণেই দেবী পার্বতীর পরিত্যক্ত কোষ থেকে দেবী কৌশিকী’র জন্ম হয়। তিনি অ-যোনী জাত নারী হওয়ায় খুব সহজেই বধ করতে পেরেছিলেন শুম্ভ-নিশুম্ভকে। যাই হোক, দেবী কৌশিকীর জন্ম হয়েছিল বলেই ভাদ্র মাসের অমাবস্যার অপর নাম কৌশিকী অমাবস্যা হয়েছে।