বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: ১৯০৫ সালে বড়লাট লর্ড কার্জন কর্তৃক ‘বঙ্গভঙ্গে’র প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল গোটা বাংলা। নেতৃত্বে কবিগুরু। তাঁরই পরিকল্পনায় হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের হাতে রাখী বেঁধে (Raksha Bandhan) সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয় গোটা দেশে। কিন্তু সেটাই শুরু নয়। বরং এর বহুকাল আগে থেকেই এদেশে রাখীবন্ধন উৎসবের প্রচলন।
আরও পড়ুন: মনসা : পুরাণের পাতা থেকে লোককথার দেবী
ইতিহাস বলে, ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ সম্রাট আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোক্সানা রাজা পুরুকে একটি সুতো পাঠিয়ে তাঁর স্বামীর কোনও ক্ষতি না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে চিতোরের রানি কর্ণবতী-ও একই উদ্দেশ্যে মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখী প্রেরণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
শুধু ইতিহাস কেন, এমনকি হিন্দু পুরাণেও রয়েছে রাখীবন্ধন বিষয়টির একাধিক উল্লেখ। মহাভারতে রয়েছে, কোনও একটি যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের হাত আঘাতপ্রাপ্ত হলে পাণ্ডব-ঘরণী দ্রৌপদী ক্ষতস্থানটিতে নিজের শাড়ির কিছু অংশ ছিঁড়ে বেঁধে দেন। এই ঘটনায় অভিভূত হয়ে কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে নিজের ভগিনী বলে ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে কোনও না কোনও দিন এর প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যা তিনি রাখেন দুঃশাসন কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় তাঁর সম্মানরক্ষা করে।
আরেকটি কাহিনীটিও বেশ চমকপ্রদ। দৈত্যরাজ বলি আরাধ্য দেবতা বিষ্ণুকে নিজ রাজ্য পাতালে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লক্ষ্মীদেবী যার ফলে অতিশয় দুঃখিত হন। তিনি এক হতদরিদ্র রমণীর ছদ্মবেশে বলির কাছে গিয়ে বললেন— স্বামী নিরুদ্দেশ, তাই আশ্রয় দেওয়া হোক তাঁকে। দয়ালু বলি রাজি হলে শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন ছদ্মবেশী লক্ষ্মী তাঁর হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। দৈত্যরাজ এর কারণ জানতে চাইলে দেবী নিজের স্বরূপ ধারণ করে সবটা খুলে বলেন। তখন বলিরাজ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। ধারণা করা হয়, সেই থেকেই উৎসবটি ভাই-বোনের বন্ধন উৎসব হিসেবে খ্যাত।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
রাখী হল ভাই-বোনের বন্ধনের উৎসব, যুগে যুগে যা ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে এসেছে। দুটি পৌরাণিক লোককাহিনীও প্রচলিত। এক, যমের হাতে বোন যমী এইদিন রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন। দুই, গণেশকে ভগিনী লক্ষ্মীদেবী রাখী পড়ালে গণেশের দুই পুত্র শুভ এবং লাভের হিংসা হয়, কারণ তাঁদের কোনও বোন ছিল না। তখন পুত্রদের সন্তোষের জন্য লম্বোদর দুই স্ত্রী সিদ্ধি এবং ঋদ্ধির অন্তরের দিব্য আগুন থেকে সন্তোষী নাম্নী এক কন্যার জন্ম দেন।