বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: রাধাবল্লভীর নাম শোনেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কবি লিখেছেন, “ওগো লুচি তোমার মান্য ত্রিভুবনে।” রাধাবল্লভী সেই লুচির-ই এক জ্ঞাতি ভাই। যা যেকোনও বড় অনুষ্ঠানের ভোজে নিয়মিত ওপেনার ছিল। আজও নান, কুলচা ইত্যাদির ভিড়ে একটু অনিয়মিত হয়ে গেলেও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকু।
আরও পড়ুন: দেবী দুর্গার হাতে বধ হওয়া মহিষাসুর আসলে শিবেরই অবতার?
মাষকলাই বেঁটে তার সঙ্গে ময়দা মিশিয়ে তারপর হিং, মৌরি, আদা, লঙ্কা ইত্যাদির পুর দিয়ে তৈরি রাধাবল্লভী অনেকটা ডালপুরীর মতই। তবে আকারে এটি ডালপুরীর থেকে অনেকটাই বড়। ছোলার ডাল আর আলুর দমের সঙ্গে প্রায়শই দেখা যায় বাঙালির পাতে। তবে এই বিশেষ খাবারটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও নেহাত কম নয়। শোনা যায়, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং রাধাবল্লভীর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।
এমনকি এই ‘রাধাবল্লভী’ নামকরণও হয়েছে মহাপ্রভুর আরাধ্য দেবতার নাম থেকে। ১০৮ নামের অধিকরী শ্রীকৃষ্ণের এক নাম, রাধাবল্লভ। সেই নাম থেকেই এই সুস্বাদু খাবারটির নামকরণ। চমকপ্রদ বিষয় হল, কেন এই নামকরণ, তার নেপথ্যে একটি নয় বরং তিনটি আলাদা আলাদা গল্প চালু।
একটি মত অনুযায়ী, খড়দহে প্রতিষ্ঠিত শ্যামসুন্দর জিউয়ের জন্য চৈতন্যদেব স্বয়ং এই খাবারটির উদ্ভাবন করেন। অন্য মতে, মুর্শিদাবাদের কান্দি গ্রামের জমিদাররা নিজেদের কুলদেবতা রাধাবল্লভকে এই খাবারটি ভোগ হিসেবে দিতেন। সেই কারণেই এর নাম, রাধাবল্লভী। আবার আরেকটি মত বলে, কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির গৃহদেবতা রাধাবল্লভকে এই পদটি ভোগ দেওয়া হত।
অবশ্য রাধাবল্লভীর উৎপত্তি বাংলায় কি না তা নিয়েই যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। প্রাচীন শাস্ত্রে এই খাবারটির উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে সংস্কৃতে এর নাম দেওয়া হয়েছে, বেষ্টনিকা। দ্রব্যগুণের কারণে এহেন নামকরণ। কথিত, জিতেন্দ্রনাথ নামক জনৈক মোদক বৃন্দাবন থেকে এই পদটি শিখে আসেন। তারপর কলকাতায় চালু করেন। ইনি নাকি ছিলেন পুঁটিরামের জনৈক আত্মীয়। সেই সূত্রেই পুঁটিরামের রাধাবল্লভী এত প্রসিদ্ধ।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
যাই হোক, আজও কলকাতার সূর্য সেন স্ট্রিটে বিখ্যাত মিষ্টির দোকান পুঁটিরামের বাইরে কার্যত লাইন দিতে দেখা যায় রাধাবল্লভী-প্রত্যাশী বঙ্গসন্তানদের। এই বিশেষ খাবারটির জন্য কলকাতায় সবথেকে প্রসিদ্ধ দোকান এই পুঁটিরামই। অন্যদিকে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে মহেশ দত্তের দোকানের রাধাবল্লভীরও খ্যাতি রয়েছে।