প্রিয়া দত্ত, কলকাতা: গুরু-শিষ্য পরম্পরার বিষয়টি চলে আসছে সেই বৈদিক যুগ থেকে। বাবা এবং মায়ের পর যদি শিরোধার্য কেউ থাকেন তবে তিনি অবশ্যই শিক্ষাগুরু। একজন শিক্ষক যে শুধুমাত্র পুস্তক শিক্ষায় শিক্ষিত করেন তা নয়, তিনি একটি ছাত্রকে ভাল মন্দ বোধ বিচারের বিষয়েও সম্যক ধারণা লাভ করতে সাহায্য করেন৷ গড়ে তোলেন দূর ভবিষ্যতের ভিত৷ মজবুত সেই ভিতের দৌলতে নিজের অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে যায় নবজাতক৷
আরও পড়ুন: এবার সেলুলয়েডের পর্দায় রানু মন্ডল: তৈরি হচ্ছে বায়োপিক, মুখ্য চরিত্রে কে জানেন
প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা কিংবা স্নেহ-মমতার সাহচর্যে নবজাতককে তিল তিল করে গড়ে তোলার দৌলতে মা-বাবা যেমন প্রথম শিক্ষকের দাবিদার তেমনই স্কুল বা পাঠশালার শিক্ষাগুরুকেও কিন্তু অস্বীকার করা যায় না৷ কথায় বলে, যে নর-নারীর দৌলতে পৃথিবীর প্রথম আলোর সঙ্গে নবজাতকের পরিচয় ঘটে, সেই বাবা-মা তাঁর প্রথম গুরু। আর যিনি ছোট্ট শিশুর মননে জ্ঞান-আহরণের খিদের ‘বীজ’ রোপণ করে দেন তিনি শিক্ষাগুরু।
আরও পড়ুন: কেন ভাঙছে যৌথ পরিবার, কি বললেন নচিকেতা
আজ রবিবার৷ ক্যালেন্ডারের নিয়মে একুশের ৫ সেপ্টেম্বর৷ ফি-বারের মতো এবারও ঘটা করে দেশ জুড়ে শিক্ষক দিবস পালিত হবে৷ আদর্শ শিক্ষক হিসাবে আমরা ড: শ্রী সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের প্রতিকৃতি সামনে রেখেই শিক্ষক দিবস পালন করব। একজন সুদক্ষ দার্শনিক, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক হিসেবেই তাঁর পরিচয় সর্বাধিক। শিক্ষার এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসাই বারংবার তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরবারে।
আরও পড়ুন: ফিকে হচ্ছে আবেগ, ভোগ সর্বস্ব বাঙালি আরও আত্মকেন্দ্রিক
বিশেষত তাঁর নিজের ছাত্রদের থেকে সব সময় পেয়েছেন অগাধ ভালবাসা। এমনকি বিদেশের মাটিতেও তাঁর সান্নিধ্য পেয়ে উদ্ভূত হয়েছেন অসংখ্য মেধাবী পড়ুয়া৷ ডাক পেয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেও। শিক্ষকতা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও৷ কালের দাবি মেনে ভারতীয় সংস্কৃতি, শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে ইউনেস্কোর উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর সু-নিপুণ জ্ঞান তাঁকে বাধ্য করিয়েছিল ইউনেস্কোর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাতে।
আরও পড়ুন: west bengal assembly election 2021: বাংলার ‘রায়’-এ ‘সত্য’-এর ‘জিৎ’
১৯৬২ সালে স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে অধিষ্ঠিত হন ড: শ্রী সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। এর আগে ১৯৫২ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত ছিলেন। যখন তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দেশ-চালনা করতেন, তাঁর অনুগামীরা, ছাত্রছাত্রীরা এবং বন্ধু-বান্ধবরা ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করবেন বলে অনুরোধ করেন। হাজারও অনুরোধ-উপরোধের জেরে রাধাকৃষ্ণণ সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘আমি তোমাদের ভালবাসাকে অস্বীকার করতে পারি না৷ তবে আমার একটাই অনুরোধ, ৫ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিবস পালন না করে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করলে বেশি খুশি হব৷’’ সেই শুরু৷ তখন থেকেই ৫ সেপ্টেম্বর দিনটি দেশজুড়ে পালিত হয়ে আসছে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই৷
আরও পড়ুন: উনিও চিকিৎসক, ওঁনাকে কেউ আড়ালে কসাই বলেন না!
শিক্ষায় ছিল তাঁর ধ্যান, জ্ঞান এবং সব চিন্তার মণি৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে শিক্ষক নয়, দেখতেন ছাত্র হিসেবে৷ বিশ্বাস করতেন-‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’৷ আমরা কি তাঁর সেই বিশ্বাসকে অন্তর থেকে উপলদ্ধি করি? মানত্য দিই? তাহলে চারিদিকে এত হিংসা, অশান্তির বাতাবরণ কেন? কেন পান থেকে চুন খসলেই ঘটছে ধৈর্য্যচ্যুতি? এই অধঃপতনের শেষ কোথায়? প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে৷ কারণ, বদলাচ্ছি আমরা৷ বদলাচ্ছে আমাদের আচার-আচরণ৷ প্রেক্ষাপট বলছে- আয়নায় মুখ দেখার সময় এসে গিয়েছে৷ কারণ, প্রকৃত শিক্ষা তো মানুষকে আরও সহজ সরল করে তোলে, নয় কি?