সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপে অভাবকে হার মানাতে জীবনপণ লড়াইয়ে নেমেছেন সমরেশ

0
44

সুদেষ্ণা মণ্ডল ,পাথরপ্রতিমা: একচিলতে বাড়িতে মা আর ছেলের বসবাস। নুন আনতে পান্তে ফুরনো সংসার৷ তারওপর রয়েছে বছর বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷ বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে ছড়িয়ে রয়েছে অভাব-অনটন৷ তবু সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটছে প্রতি মুহূর্তে৷ সাদা ক্যানভাসে রঙিন তুলির টানে নিজের স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে ছুটে চলেছে সমরেশ মাইতি। শুধু হাতে নয়, পা এবং মুখ দিয়েও তুলির টানে সাদা ক্যানভাসে রঙিন ছবির জন্ম দেন তিনি৷ আগুনকেও পরিণত করেন ছবিতে৷ ইতিমধ্যেই নিজের নাম নথিভুক্ত করেছে, ‘ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ড ও ন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ডে’। কঠিন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে এবার ইন্ডিয়ান গট ট্যালেন্ট ও গিনিস বুকে নিজের নাম তালিকা করতে মরিয়া সে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে চরম আর্থিক কষ্ট৷

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ পাথরপ্রতিমা। এখানকারই রামগঙ্গা অঞ্চলের দক্ষিণ গোবিন্দপুরে এক চিলতে বাড়িতে বাস চিত্রকর সমরেশ মাইতি। এলাকার শিশুদেরকে অঙ্কন প্রশিক্ষণ দিয়ে যৎসামান্য অর্থ উপার্জন করেই চলে সংসার। সমরেশের ছবি আঁকার কৌশল আর পাঁচটা চিত্র শিল্পীর মতন নয়। কখনও মুখে তুলে নিয়ে সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছেন নানা চিত্র৷ কখনও বা হাত ও পায়ের সাহায্যে একসঙ্গে ২২ টি তুলি ধরে সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন ছবি৷ আগুন জ্বালিয়ে চোখের নিমেষে সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন সিদ্ধিদাতা গণেশ সহ একাধিক চিত্রকলা।

- Advertisement -

সমরেশের কথায়, ‘‘জন্ম থেকেই দারিদ্রতা আমার সঙ্গী৷ আজও সেই দারিদ্রতাকে উপেক্ষা করেই নিজের স্বপ্ন দেখছি। আগামী দিনে কতটা এগিয়ে যেতে পারব জানি না৷ তবে আমি অনুশীলন চালিয়ে যাব। তবে এঅই লড়াইয়ে সরকারকে পাশে পেলে আমার যাত্রাটা একটু সুগম হবে৷’’ মুখে কিংবা পায়ে তুলি ধরলেন কেন? সমরেশ জানান, সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের ছবি আঁকা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন৷ এরপরই কঠিন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে সেই কৌশল রপ্ত করেন।

ছেলের এমন লড়াইয়ে সরকারি সাহায্যের আশায় বসে রয়েছে সত্তরোর্ধ্ব সমরেশের মা। তিনি জানান, কোনরকম একচিলতে ঘরে বসবাস করি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেকোনও মুহূর্তে উড়ে যাবে ঘরের চালে টুকু। ছেলের যৎসামান্য উপার্জনের টেনেটুনে চলছে সংসার। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়াই সংসারটা বাঁচে। এই অবস্থায় সমরেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম পাত্র। তিনি জানান, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা অভূতপূর্ব প্রতিভাধর সমরেশ। অভাবের জন্য এই রকম এক প্রতিভাধর চিত্রশিল্পী হারিয়ে যাবে আমরা সেটা হতে দিতে পারি না। সমরেশ যাতে তার নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে সেই জন্য সবরকম সাহায্য পঞ্চায়েতে তরফ থেকে করা হবে।’’ পঞ্চায়েত কর্তার আশ্বাস বাস্তবে পরিণত হয় কি না, তা অবশ্য বলবে সময়ই৷

আরও পড়ুন: Bogatui genocide: আসল রহস্য ফাঁস করার হুমকি দিলেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত আনারুল