বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতবর্ষ। সত্যিই কী গণতন্ত্র? হ্যাঁ প্রশ্নটা বারংবার ঘুরে ফিরে আসবে বৈকি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যতই বিদ্রূপ হোক। আসবেই। বস্তুতঃ আমাদের নিজেদের-ই মনে জাগাতে হবে এ প্রশ্ন।
কেবলমাত্র ২৬ শে জানুয়ারি কিংবা ১৫ অগাস্টের মত বিশেষ দিনে অবশ্য নয়। সেটা লোকদেখানো। বিদ্রূপ মূলতঃ সে কারণেই হয়। আমাদের প্রতিনিয়ত নিজের মনকে প্রশ্ন করা দরকার।
সবার প্রথমে যেটা চিন্তা করা দরকার। ২৬ জানুয়ারির তাৎপর্য আসলে কী? দেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ -র ১৫ অগাস্ট। অতঃপর ১৯৫০ সালের এইদিন থেকে কার্যকর হয় ডঃ ভীমরাও রামোজি আম্বেদকর রচিত ভারতীয় সংবিধান। যেখানে বলা হয়েছে সাম্যের কথা। কেবল রাজনৈতিক সাম্য-ই নয়। ধর্মীয় সাম্য। সামাজিক সাম্য। সর্বোপরি অর্থনৈতিক সাম্য।
আরও পড়ুন: আমায় রসেবশে রাখিস, মা: খাদ্যরসিক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও কিছু কথা
ঠাট্টা-বিদ্রূপ চলছে, চলুক। এরই মধ্যে বুকে হাত কেউ বলুন দেখি, রাজনৈতিক বাদে আর ক’টি সাম্যের সে অর্থে অস্তিত্ব রয়েছে এই দেশে? নামে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। অথচ আজও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ে একাধিক ভয়ঙ্কর খবরই চেপে দিতে হয় সরকারকে। কোথায় ধর্মীয় সাম্য? সমাজে কার্যত দুটি শ্রেণী। শাসকরা উঁচুতে, তাঁরা বিনা ক্লেশে আরও উঁচুতে উঠছেন। অন্যদিকে শাসিতের কুঁড়ে ধসেই চলেছে। এ নাকী একবিংশ শতক! অথচ এখনও মানুষের কুসংস্কারকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা ভারতবর্ষে দস্তুর। এখানে আর্থসামাজিক সাম্য-ই বা কোথায়?
সবথেকে বড় কথা, রাজনৈতিক সাম্য-ই বা সম্পূর্ণরূপে কোথায়? হ্যাঁ, নেতারা যখন ইচ্ছে ডাল বদলে ফেলতে পারেন। সে অধিকারটুকু তাঁদের আছে। কিন্তু যাঁদের জন্য তাঁদের এত রোয়াব, সেই জনতা জনার্দন? আজও ভোটের দিনে একটা বড় অংশ মানুষ নিজের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আগের রাতে তাঁদের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়। প্রাণের হুমকি দেওয়া হয়। তারপর নানারকম অত্যাচার, বোমাবাজি— এসব তো রয়েইছে। নাঃ কেবল গাঁ-গঞ্জ নয়, খোদ কলকাতার বুকেই ঘটে এ ঘটনা। তখন কিন্তু “আমরা কী সত্যিই স্বাধীন”— এই প্রশ্নে বিদ্রুপের ঝড় তোলা নেটাগরিকদের-ই প্রতিবাদের ঝড় তুলতে দেখা যায়।
কেন ২৬ জানুয়ারিকেই গণতন্ত্র দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হল? ১৯৩০ সালের এই দিনেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক পূর্ণ স্বরাজে’র সংকল্প ঘোষিত এবং গৃহীত হয়েছিল। এই স্বরাজ কিন্তু মোটেই আমাদের দেখা এই গণতন্ত্র নয়। বরং মহাত্মা গান্ধী বর্ণিত “রামরাজ্য”। যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে “সোনার পাথরবাটি” ছাড়া কিছুই মনে হবে না।
এরপরেও কী বলা যায়, আমরা সত্যি সত্যিই স্বাধীন হয়েছি? ভাবুন ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন।