বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: পুরুষের যৌনাঙ্গকে লিঙ্গ বলা হয়। ফলতঃ এই ধারণা বিদ্যমান যে শিবলিঙ্গ যৌনাঙ্গের প্রতীক। ব্রিটিশ গবেষকরাও এই ধারণায় বিশ্বাসী। এমনকি তাঁরা এও বলেছেন, শিবলিঙ্গের উপাসনা করলে মানুষের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: বুড়ির বেশে রক্ষা করেন ছোট শিশুদের, মা কালীর এই রূপ অচেনা বাঙালির কাছে
সত্যিই কি তাই? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দেশে পুরাণ যেমন রয়েছে, তেমনিই একাধিক পৌরাণিক লোকশ্রুতিও বিদ্যমান। তেমনই এক লোকশ্রুতি অনুসারে, দেবাদিদেব যখন দেবী পার্বতীকে বিয়ে করতে যান, পার্বতীর মা মেনকা’র বরণডালা শিবের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে। কারণ, মেনকা উচ্চতায় খাটো ছিলেন। সুতরাং তাঁর হাতের বরণডালা শিবের যৌনাঙ্গের ওপরে উঠতে পারেনি। ধারণা করা হয়, এই ঘটনা থেকেই শিবলিঙ্গ পুজোর প্রচলন।
ব্রিটিশ গবেষকরা অবশ্য এসমস্ত লোকশ্রুতিতে কান দেননি। কিন্তু তাঁরা এ কথা সর্বতোভাবে প্রচার করে গিয়েছেন যে শিবলিঙ্গ আসলেই যৌনাঙ্গের প্রতীক। স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম এই দাবি নস্যাৎ করে দেন। ১৯০০ সালে প্যারিসের ধর্মীয় কংগ্রেসে শিবলিঙ্গের প্রকৃত ব্যখ্যা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন তিনি। স্বামীজি বলেছিলেন, শিবলিঙ্গের ধারণা এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভের ধারণা থেকে। স্কম্ভ বা যূপস্তম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ। যাকে অনন্ত ব্রহ্মের প্রতীক বলে মনে করা হত। এমনকি শালগ্রাম শিলাকে-ও কেউ কেউ পুরুষাঙ্গের প্রতীক মনে করতেন বা এখনও করেন। স্বামীজি সেই প্রসঙ্গে-ও বিশদ ব্যখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, এই ধারণাটি বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত অন্ধকার যুগে কিছু অশিক্ষিতের মস্তিষ্কপ্রসূত গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
হিন্দু পুরাণও কিন্তু একই কথা বলে। তাই পুরাণ ঘাঁটলেই স্বামীজির ব্যখ্যার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। পুরাণ বলছে, শিবলিঙ্গকে মূলতঃ শিবের নির্গুণ ব্রহ্মসত্ত্বার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অপরদিকে, ‘শিব’ শব্দের অর্থ একটি প্রলয়ের পর গোটা জগৎ যেখানে নিদ্রিত অবস্থায় থাকে। আর লিঙ্গ শব্দের অর্থ-ও নাকি একই। আর এই ধারণা থেকেই শিবলিঙ্গকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর জ্ঞান করা হয়।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শিবলিঙ্গের তিনটি অংশ। নিচের অংশকে ব্রহ্ম পিঠ, মাঝের অংশকে শিব পিঠ এবং ওপরের অংশটিকে শিব পিঠ বলা হয়। শিব পিঠে তিনটি তিলকের দাগ রয়েছে। যা শিবের কপালে থাকে। ফলে যুক্তি দেওয়া হয়, শিবলিঙ্গ যদি যৌনাঙ্গ হত, তাহলে ওই তিনটি দাগ থাকত না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, স্বামী বিবেকানন্দের গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নাকি “জীবন্ত লিঙ্গ” পুজো করতেন।