
নদিয়া: গ্রামের বীর সন্তানের স্মৃতিরক্ষায় যে বেদি তৈরি করা হয়েছিল তাতে আজ অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। চারিদিকে শ্যাওলা, আগাছা ৷ ফাটল ধরেছে মেঝেতেও ৷ মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য ৷ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন যে বিপ্লবী, সেই বসন্তকুমার বিশ্বাসকে মনে রাখেনি দেশ, দেশের প্রশাসন।
নদিয়ার ভীমপুর থানার পোড়াগাছা গ্রামে ১৮৯৫ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ দাদু দিগম্বর বিশ্বাস নীল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জ্যেঠু মন্মথ নাথ বিশ্বাস ছিলেন বিপ্লবী। তাই ছেলেবেলা থেকেই স্বদেশী আবহে বেড়ে ওঠেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস। এলাকারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। তাঁর দশ বছর বয়সে বঙ্গ ভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন। চারিদিকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। এরপরই সক্রিয় ভাবে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন বসন্ত কুমার বিশ্বাস ৷ সামনে থেকে লড়াই করেন । তাঁর মতো অসংখ্য বিপ্লবীর আন্দোলনে বাধ্য হয়ে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে ব্রিটিশরা। তখনও অবশ্য লক্ষ্য পূরণ হয়নি বিপ্লবী বসন্ত কুমারের। বৈপ্লবিক কার্যকলাপ জারি থাকে।
১৯১২ সালের ২৩শে ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন বসন্তকুমার বিশ্বাস। ফলস্বরূপ কৃষ্ণনগরের একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ৷ ১৯১৫ সালের ১৫ই মে তাঁর ফাঁসি হয়। এরপর বসন্তকুমার বিশ্বাসের বসতভিটে ভেঙে একটি শহীদ বেদি তৈরি করা হয় ৷ কী অবস্থায় রয়েছে সেই শহীদ বেদি? তা দেখতে যাওয়া হয়েছিল পোড়াগাছা গ্রামে৷ চোখে যা ধরা পড়ল তাতে পরিচর্যার অভাব প্রকট৷ জল ভরা, ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে তবেই যাওয়া যায় বেদির সামনে। সামনের রাস্তাটাও বাঁধানো হয়নি৷ বেদির দুর্দশা আরও বেশি প্রকট। গায়ে শ্যাওলা ধরেছে ৷ শেষ কবে বেদি চত্বর পরিষ্কার করা হয়েছিল, তা জানেন না স্থানীয়রাও। ফাটল ধরেছে মেঝেতে। নেই ন্যূনতম সংরক্ষণের ছাপ। যত্রতত্র রয়েছে আগাছা। ইটের গাঁথনির মধ্যে দিয়ে ফোকলা দাঁতের মতো দেখা যায় বাড়ির ভিতরের অংশ।
বাড়িটি সংরক্ষণের কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। কাছেই একটি বাড়িতে থাকেন বসন্তকুমার বিশ্বাসের ভাইপো মনোজিৎ ও তাঁর স্ত্রী। তাঁরা জানালেন, বিপ্লবীর স্মৃতিরক্ষায় কিছুই করেনি সরকার। কেউ কখনও খোঁজ নিতে আসেননি নিজেদের উদ্যোগেই একটি দরমার ঘর বানানো হয়েছে। বসন্ত কুমার বিশ্বাসের স্মৃতি বিজড়িত বেদি যারা দেখতে আসেন, তাদের ওই দরমার ঘরেই বসতে দেওয়া হয়৷ ঘরে রয়েছে বসন্তকুমার বিশ্বাসের একটি আবক্ষ মূর্তি। স্থানীয়দের অবাক করে আরও একটি বিষয় ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামী বসন্ত কুমার বিশ্বাসেরই এক ভাইপো উজ্জ্বল বিশ্বাস রাজ্যের মন্ত্রী। অথচ এহেন চরম অবহেলায় রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিষ্যের বসত ভিটে ও বেদি। কোনও হেলদোল নেই সরকার পক্ষের কারোরই।
আরও পড়ুন: পাঠকদের জন্য সুখবর, পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়ে বই মিলছে কলেজ স্ট্রীটে
এ বিষয়ে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস এর দাবি, “পূর্ববর্তী সরকারের আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা ভাবনা ছিল না। আমরা সরকারে আসার পর থেকেই ওখানে রাস্তা তৈরি করেছি। আমি নিজেও উদ্যোগ নিয়ে পুরাতন বাড়ি মেরামত করার চেষ্টা করেছি। একার উদ্যোগে সবকিছু করা সম্ভব নয়। যেহেতু তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন সেই কারণে সাধারণ মানুষেরও উচিত তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁর স্মৃতি আগলে রাখা।”