নয়াদিল্লি: অনেকদিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিল৷ অবশেষে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়ন্ত্রণে কড়া নিয়ম আনল কেন্দ্রীয় সরকার৷ বৃহস্পতিবার সেই নতুন নির্দেশিকা জারি করেন কেন্দ্রীয় আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ৷
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজগুলির বিষয়বস্তু নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়৷ তার পরই আরও জোরাল দাবি ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হওয়া বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করার৷ তারপর লালকেল্লায় হামলায় পর টুইটারের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ তুঙ্গে ওঠার পরও সোশ্যাল মিডিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্তারা আরও তৎপর হয়ে ওঠে৷ এদিন ক্যাপিটল হিলে হামলার প্রসঙ্গ টেনে এনে রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়াগুলির দ্বিচারিতা আর মেনে নেওয়া হবে না৷’’
অনেকের মতে, নয়া নির্দেশিকার মাধ্যমে সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করবে৷ তা খারিজ করে রবি শঙ্কর প্রসাদ জানান, সরকার চায় এদেশে সোশ্যাল মিডিয়াগুলি তাদের ইউজারদের কথা ভেবে আরও ভালো মেকানিজম নিয়ে আসুক৷ সব সোশ্যাল মিডিয়াকে ভারতে স্বাগত৷ কিন্তু এখানে তাদের কোনও দ্বিচারিতা চলবে না৷ ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া পুলিশের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছিল৷ অথচ লালকেল্লায় হামলার ঘটনায় ওই একই সোশ্যাল মিডিয়া দ্বিচারিতার পথ বেছে নেয়৷ এটা চলবে না৷
নতুন নির্দেশিকায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য ত্রিস্তরীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আনছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় একটি স্বতন্ত্র কমিটি তৈরি করা হবে৷ তার মাথায় থাকবেন সুপ্রিম কোর্ট অথবা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি৷ তাঁরাই সোশ্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন৷
এছাড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যৌন উসকানিমূলক, নগ্নতা রয়েছে এমন কোনও পোস্টের বিরুদ্ধে কোনও মহিলা অভিযোগ জানালে সেক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বিতর্কিত পোস্ট সরিয়ে ফেলতে হবে৷ প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মের জন্য একজন করে মুখ্য অভিযোগ আধিকারিক রাখতে হবে৷ ওই আধিকারিককে অবশ্যই ভারতের বাসিন্দা হতে হবে৷ ১৫ দিনের মধ্যে যাবতীয় অভিযোগের নিরসন করতে হবে৷
প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে প্রতি মাসে একটি করে সম্মতি রিপোর্ট দাখিল করতে হবে৷ সেখানে বলতে হবে, কতগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ এবং তার প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ ভারতের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে প্রথম কে সেই তথ্য বা ছবি পোস্ট করা হয়েছিল তা জানাতে বাধ্য থাকবে সোশ্যাল মিডিয়াগুলি৷ ফেক নিউজ প্রথম পোস্ট করা ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে হবে৷
সব বিষয় বা কনটেন্টকে বয়স-ভিত্তিক পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করতে হবে৷ সেগুলি হল ‘ইউনিভার্সাল (ইউ)’, ‘ইউ/এ ৭+’, ‘ইউ/এ ১৩+’, ‘ইউ/এ ১৬+’, ও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’। শেষ তিন শ্রেণির জন্য পেরেন্টাল লক রাখতে হবে৷