অমরাবতী: ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই৷ এবার কাজটাও সেরে ফেললেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডি৷ সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় পাশ হল তিন রাজধানীর প্রস্তাব৷ অর্থাৎ অন্ধ্রপ্রদেশ তিনটি রাজধানী পেতে চলেছে৷ দেশের ইতিহাসে এ এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত৷ ভারতের কোনও রাজ্যেই একটির বেশি রাজধানীর চল নেই৷ একটা সময় জম্মু ও কাশ্মীরে দুটি রাজধানী ছিল৷
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশনের ডাক দেয় সরকার৷ মন্ত্রিসভায় বিলটি পাশ করার পর সেটি বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে৷ সকাল এগারোটায় শুরু হয় অধিবেশন৷ কিন্তু বিল পেশের পরই সেটি বিরোধিতার পথে হাঁটে বিভিন্ন বিরোধী দল৷ সবচেয়ে বেশি সরব টিডিপি৷ তারা বিধানসভা অভিযানের ডাক দেয়৷ বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাস্তায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
অন্ধ্রপ্রদেশের বর্তমান রাজধানী অমরাবতী৷ নয়া প্রস্তাবেও অমরাবতীকে রাজধানীর তালিকায় রাখা হয়েছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বিশাখাপত্তনম এবং কুর্নুল৷ জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক রাজধানী হচ্ছে বিশাখাপত্তনম৷ অর্থাৎ রাজ্য সচিবালয় বা মুখ্যমন্ত্রীর অফিস হবে বিশাখাপত্তনমে৷ বিচারবিভাগীয় রাজধানী হচ্ছে কুর্নুল৷ এখানে থাকবে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট৷ এবং অমরাবতী পাচ্ছে বিধানসভা৷
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে তেলেগু দেশম পার্টি(টিডিপি)৷ মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় টিডিপি নেতাদের প্রিভেনটিভ কাস্টডিতে নেওয়া হয়৷ অশান্তির আশঙ্কায় অমরাবতীতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ প্রশাসন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু বরাবরই ‘এক রাজ্য এক রাজধানীর’ পক্ষে৷ গত মাসে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন৷ জানিয়েছিলেন, এটা জনবিরোধী এবং কৃষকবিরোধী সিদ্ধান্ত৷ রাজ্য সরকারের আরও একবার তিন রাজধানী ফর্মুলা নিয়ে ভাবা উচিত৷ এতে বিনিয়োগে প্রভাব পড়তে পারে৷
শুধু বিরোধীরা নয়, রাজ্যের কৃষকদের একটা বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধী৷ কিছুদিন আগেও তিন রাজধানী ফর্মুলার বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল কৃষকরা৷ তাদেরও দাবি ছিল, অমরাবতীকেই রাজধানী করতে হবে৷ অমরাবতীর পরিকাঠামো উন্নয়নে ২০১৪ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর আবেদনে রাজ্যের ২৮ হাজার কৃষক ৩৩ হাজার একর কৃষিজমি তুলে দিয়েছিল৷ শুরু হয়েছিল উন্নয়নের কাজ৷ কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর চন্দ্রবাবু নাইডুর সেই পরিকল্পনায় জল ঢালেন জগন মোহন রেড্ডি৷ গত বছর ডিসেম্বরে তিনি তিন রাজধানী ফর্মুলার কথা ঘোষণা করেন৷ জগন সরকারের প্রস্তাবে অমরাবতী পূর্ণ রাজধানীর মর্যাদা পাচ্ছে না৷ এতে স্বভাবতই অখুশি হন জমি দেওয়া কৃষকরা৷ ক্ষুব্ধ হন বিরোধীরাও৷