মিলন পণ্ডা, দিঘা: চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন, সমুদ্র বাঁধের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন আপনি৷ পায়ে হেঁটে নয়, চারচাকায়৷ জানালার কাচের ওপারে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে অগুনতি ঢেউ৷ কাচ নামালেই দমকা হাওয়া আপনাকে নিয়ে যাবে ‘মন কেমনে’র দেশে! কানে আসবে সমুদ্রের জলে উত্থাল-পাতাল হতে থাকা ঢেউয়ের গর্জন৷
আরও পড়ুনঃ বাঘ থেকে অ্যানাকোণ্ডা, দত্তক নিতে পারেন আপনিও, বাড়ছে দত্তক নেওয়ার প্রবণতা
মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভকে আর কষ্ট কল্পনা করার দরকার নেই৷ আমার আপনার প্রিয় টুরিস্ট স্পট দিঘাতে গেলেই এবার দেখা মিলবে এই স্বপ্নের সৈকত সরণীর৷ অপেক্ষা মাত্র আর কয়েকদিনের৷ তারপরই পর্যটকদের জন্য ডানা মেলবে ৩০ কিমি দীর্ঘ এই সৈকত সরণী৷ কাঁথি থেকে শৌলা হয়ে মন্দারমনি-তাজপুর-জলধা-শঙ্করপুর-মোহনা-ওল্ড দিঘা-নিউ দিঘা হয়ে উদয়পুর বিচে পৌঁছাতে পারবেন এই স্বপ্নের সৈকত সরণী ধরে৷
আরও পড়ুনঃ মিথ্যে ‘আচ্ছে দিন’ নয়, সত্যিকারের আচ্ছে দিন আনবে তৃণমূল, রেড রোডে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
বর্ধমান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক তাপস মিত্র বলছিলেন, “এর আগেও আমরা ১০-১২ বার দিঘা বেড়াতে এসেছি। এই মেরিন ড্রাইভ হওয়াতে খুব কম সময়ে সমুদ্রের কাছে পৌঁচে যেতে পারব৷ অনেকটা পথ সেভ হবে৷ কারণ যেহারে পেট্রলের দাম বাড়ছে তাতে বাপু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে কিলোমিটার একটা মাইনে রাখে৷ তার ওপর ঘরের কাছে মুম্বইয়ের স্বাদ পাওয়াটাও তো চাট্টিখানি কথা নয়৷ এই জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ৷’’
দিঘা-মন্দারমনি-তাজপুর পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক দশকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিশ্ব দরবারে নতুন এক পরিচিত পেয়েছে সৈকতনগরী দিঘা। যা সম্মানের, গৌরবের, সফলতার এবং সক্ষমতার। সৈকত সরণী হলে তা যে কেবল এই দিঘা-শঙ্করপুর, তাজপুর-মন্দারমণির পর্যটনের মানকে এগিয়ে নেবে তা নয়, বরং এটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রাকে এগিয়ে দেবে অনেকখানি। এলাকার পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বপ্নের এই সৈকত সরণি হবে নতুন একটি মাইলফলক।
২০১৫ সালে দিঘা থেকে কাঁথি পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের কোষাগার থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭০ কোটি টাকা৷ সমুদ্রবাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সে কাজ এখন প্রায় শেষের মুখে৷ কাজের দায়িত্বে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ঝাপটায় মাঝে শঙ্করপুর থেকে জলধা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাঁধের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেচ দফতর দ্রুততার সঙ্গে সেই ক্ষয়ক্ষতি মেরামতের কাজ করছে। এছাড়া মন্দারমণি একাংশে বাকি রয়েছে রাস্তা তৈরির কাজ। সমুদ্রে সংযোগকারী শঙ্করপুর মৎস্যবন্দর লাগোয়া নায়েকালী, তাজপুর সৈকত লাগোয়া জলধা এবং কাঁথির শৌলাতে সেতু তৈরির কাজও প্রায় শেষের পথে। তিনটি সেতুর মধ্যে নায়েকালী সেতু ও অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ৷
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা দ্বিগবিজয় পাল বলেন “প্রথমে ধন্যবাদ জানাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। স্বপ্নের প্রকল্প চালু হলে এই মেরিন ড্রাইভের দৌলতে পর্যটকেরা যেমন আরও বেশি করে সমুদ্রকে কাছ থেকে উপভোগ করার সুযোগ পাবেন তেমনই আমরা স্থানীয়রা যানজটের হাত থেকে পাব মুক্তি৷ মেরিন ড্রাইভের ফলে আরও উন্নত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ বাড়বে পর্যটন ব্যবসাও৷’’
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ তাই স্বপ্নের সৈকত সরণীর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার প্রতীক্ষার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছে দিঘার স্থানীয় বাসিন্দা থেকে আপামর সমুদ্রপ্রেমীদের মনে৷ রেডি, স্টেডি, গো…৷ শুভক্ষণটি অবশ্য এখনই খোলসা করতে নারাজ দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ৷ পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা দিদির স্বপ্নের প্রকল্প৷ শুভলগ্নের দিনক্ষণও তিনিই ঠিক করবেন৷’’
আরও পড়ুন: একাকীত্ব কাটানোর সেরা টোটকা: মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে…