নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুসারে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দিতে হবে ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ। সম্প্রতি এমনই তথ্য জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তার সূত্র মারফত। সরকারি কোনও নির্দেশিকা জারি না হলেও এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কৌশলে আক্রমণ করলেন বাংলাপক্ষের নেতা গর্গ চট্টোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে তাঁর হাতিয়ার হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় রেওয়াজ।
এক মাসের বেশি সময় আগে পাশ হয়ে গিয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। যার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলন চলছে। কেন্দ্রের আনা আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের অমুসলিম ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে হয়েছে। হিন্দু, শিখ, পারসি, জৈন, খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ- এই ছয় ধর্মের মানুষদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যেই ওই আইন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের বাদ রাখার জন্য শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন চললেও দমছে না কেন্দ্র। এরই মাঝে প্রকাশ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য। যেখানে বলা হয়েছে যে অমুসলিম ব্যক্তিদেরকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ দিতে হবে। যা নিয়ে গত দিন দুই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে আগত বহু হিন্দু শরণার্থী বসবাস করেন। যারা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে বাস করছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের যাবতীয় শর্ত পূরণ হলেও ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়া নিয়ে জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। যার ফলে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে পারেন বহু হিন্দু বাঙালি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই নির্দেশিকার বাংলার মাটিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় রেওয়াজ আগে মানতে হবে। এমনই দাবি করেছেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলাপক্ষের সভাপতি গর্গ চট্টোপাধ্যায়। বাঙালির ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্মচারণের নেওয়ার জন্য হিন্দু বাঙালি যে সকল রীতি মেনে চলে তা মানতে না পারলে বাঙালির থেকে ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ নেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেই বলে দাবি করেছেন গর্গবাবু।
ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি একজন মা কালীর উপাসক এবং মা দুর্গার পুজো করা সেবায়েত পরিবারের সন্তান হিসেবে বলতে চাই- বাঙালি হিন্দুর কাছে তাঁর ধর্মের প্রমাণ যে চাইতে আসবে, তাঁকে আগে আমাদের মা কালীর বলির পাঠার প্রসাদ খেয়ে প্রমাণ দিতে হবে যে সে আমাদের থেকে প্রমাণ নেওয়ার অধিকারী। অমিত শাহ হোক বা মোদী সবাইকেই এই প্রমাণ আগে দিতে হবে।” সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “ভারতীয় সংবিধানে ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়ার কোনও বিধান নেই। আমি হিন্দু, আমি কিভাবে হিন্দু বা কোন কারণে হিন্দু এটা ভারতীয় সংবিধানে সংজ্ঞায়িত করা নেই। ফলে প্রথমত এটা অসাংবিধানিক।”
নিরামিষ আহার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সেই ঘরানার লোক। উভয়েই সংঘ পরিবারের সদস্য। সাধারণত সংঘের সেবকেরা আমিষ খাবারে অভ্যস্ত নন। তাঁদের কাছে পাঁঠার মাংস খেয়ে প্রমাণ চেয়ে কাগজ চাওয়ার পালটা দিয়েছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়।