সৌমেন শীল, কলকাতা: প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে খুন করছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভাষাতেই রাজ্যের বীরভূম জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষক আক্রমণ করল বাংলাপক্ষ। বাঙালি জাতীয়রাবাদি সংগঠনের পক্ষ থকে এই অভিমত পোষণ করেছেন বাংলাপক্ষের নেতা কৌশিক মাইতি।
ঘটনার সূত্রপাত, বিশ্বভারত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনা সঙ্গীত ঘিরে। চলতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক উপাসনা সঙ্গীত হিন্দিতে গাওয়া হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যহ্ন এই উপাসনা সঙ্গীত গাওয়া হয় তখন উপাসনাগৃহে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আচার্যের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষিত থাকে। সেই আসনে সেই সময়ে আসীন ছিলেন অধ্যাপিকা মঞ্জুরানি সিংহ।
আচার্যের বেদিতে থাকা মঞ্জুরানি সিংহ হিন্দি বিভাগের অধ্যাপিকা। তিনি বাংলাভাষা সম্পর্কে বিশেষ অবগত নন। সেই কারণে হিন্দিতেই নিজের বক্তব্য পেশ করেন মঞ্জুরানিদেবী। তাঁর বক্তব্যের শেষে দু’টি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হয়। মঞ্জুরানিদেবীর বোঝার সুবিধার্থে বাংলা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হয় হিন্দিতে। রবি ঠাকুরের লেখা ”ধ্বনিল আহ্বান…’ এবং ‘ওই আসন তলে…’ গান দু’টি গাওয়া হয় হিন্দিতে।
আচমকা সিদ্ধান্ত নয়। হিন্দিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার জন্য রীতিমতো অনুশীলন করেছিল বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিতে অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। প্রশ্নও করা হয়েছিল সঙ্গীত ভবনের সেই সকল পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে। সম্পূর্ণটাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বলে চেপে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন হিন্দিতে রবিন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া বিশ্বভাতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া।
এই নিয়েই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাংলাপক্ষ। ওই সংগঠনের নেতা কৌশিক মাইতি বলেছেন, “হিন্দিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে বিশ্বভারতী শুধু বাংলা ভাষা নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও খুন করেছে। তাঁর নিজের তৈরি করা তাঁর নিজের শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথকে খুন করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “বাংলায় লেখা রবীন্দ্র সঙ্গীত হিন্দিতে গাওয়া হচ্ছে তাও আবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপসনায়। এভাবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ বাংলা ভাষাকে খুন করছে।” এই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ সকল অহিন্দি জাতির থেকে সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে।
এই জটিলতা থেক মুক্তি পাওয়ার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা। এমনই জানিয়েছেন কৌশিক মাইতি। তাঁর কথায়, “হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তি পেতে সকল অহিন্দি জাতিকে রাজনৈতিক এবং ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের নামতে হবে। হিন্দি-উর্দু সাম্রাজ্যবাদকে ভারতের মাটি থেকে উৎখাত করা না গেলে বাঙালিসহ প্রতিটি অহিন্দি জাতির সমস্যা আরও বাড়বে। আমরা বাংলাপক্ষ বাংলার জন্য লড়ছি এবং ভারত জুড়ে অহিন্দি জাতির লড়াই হচ্ছে আমরা সেই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অংশ।”