কলকাতা: মহা ধুমধাম করে বেলুড় মঠে পালিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ১৮৫ তম জন্মতিথি উৎসব৷ মঙ্গলবার ভোরে মঙ্গলারতির মাধ্যমে এই জন্মতিথি উৎসবের সূচনা হয়৷ এরপর রামকৃষ্ণদেবের মন্দিরে বেদপাঠ ও স্তবগানে মিলিত হন মঠের সন্ন্যাসী ও মহারাজরা৷
এরপর উষা কীর্তন ও ঠাকুরের মন্দিরেই এদিন বিশেষ পুজোপাঠ ও হোমের আয়োজন করা হয়৷ বেলুড় মঠের সভা মণ্ডপে সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ বন্দনার আয়োজন করেন৷ রামকৃষ্ণকথামৃত ও রামকৃষ্ণলীলা প্রসঙ্গ পাঠ ও ব্যাখ্যারও আয়োজন করেন বেলুড় মঠের মহারাজরা৷
এছাড়াও এদিন দুপুরে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ করা হবে৷ হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর গ্রামে ১৮৩৬ সালে এক দরিদ্র ধর্মনিষ্ঠ রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ পরমহংস৷
শৈশবে গদাই নামে পরিচিত গদাধর তাঁর গ্রামবাসীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন৷ অঙ্কন ও মাটির প্রতিমা নির্মাণে তাঁর ছিল সহজাত দক্ষতা৷ যদিও প্রথাগত শিক্ষায় মনযোগ ছিল না তাঁর৷ সেযুগে ব্রাহ্মণসমাজে প্রচলিত সংস্কৃত শিক্ষাকে তিনি “চালকলা-বাঁধা বিদ্যা” (অর্থাৎ পুরোহিতের জীবিকা-উপার্জনী শিক্ষা) বলে উপহাস করেন এবং তা গ্রহণে অস্বীকার করেন৷
তীর্থযাত্রী, সন্ন্যাসী এবং গ্রাম্য পুরাণকথকদের কথকতা শুনে অতি অল্প বয়সেই পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতে বুৎপত্তি অর্জন করেন গদাধর৷ ১৮৪৩ সালে তাঁরা বাবা মারা যান৷ এরপর পরিবারের ভার গ্রহণ করেন তাঁর দাদা রামকুমার৷
এই ঘটনা গদাধরের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে৷ ধর্মীয় জীবনযাপনের ইচ্ছা তার মনে দৃঢ় হয়৷ বাবার অভাব তাকে মায়ের খুব কাছে নিয়ে আসে৷ ঘরের কাজ ও গৃহদেবতার পূজাপাঠে তিনি অধিকতর সময় ব্যয় করতে থাকেন৷ আত্মমগ্ন হয়ে থাকতেন ধর্মীয় মহাকাব্য পাঠে৷
১৮৫৫ সালে কলকাতার এক ধনী জমিদারপত্নী রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেই মন্দিরে রামকুমার প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পান৷ সেখানে দাদার কাছে চলে আসেন গদাধর৷ সেখানে তিনি প্রতিমার সাজসজ্জার দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷
১৮৫৬ সালে রামকুমারের মৃত্যু হলে গদাধর মন্দিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হন৷ মন্দিরে উত্তর-পশ্চিম আঙিনায় তাকে একটি ছোটো ঘর দেওয়া হয়ছিল তাঁকেষ সেই ঘরেই তিনি অতিবাহিত করেন তার বাকি জীবন৷
কামারপুকুরে গুজব রটে যায়, দক্ষিণেশ্বরে অতিরিক্ত সাধনার শ্রমে শ্রীরামকৃষ্ণ পাগল হয়ে গিয়েছেন৷ তখন তাঁর মা বিবাহদানের চিন্তাভাবনা করতে থাকেন৷ তারা ভেবেছিলেন, বিবাহের পর সাংসারিক দায়-দায়িত্বের ভার কাঁধে চাপলে আধ্যাত্ম সাধনার মোহ তার কেটে যাবে৷
তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসবেন৷ শ্রীরামকৃষ্ণ বিবাহে আপত্তি তো করলেনই না৷ ১৮৫৯ সালে বালিকা সারদার সঙ্গে তার শাস্ত্রমতে বিবাহ সম্পন্ন হয়৷ শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন তেইশ৷ বয়সের এই পার্থক্য উনিশ শতকীয় গ্রামীণ বঙ্গসমাজে কোনও অপ্রচলিত দৃষ্টান্ত ছিল না৷ ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা দেবীকে ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন৷ ১৮৬৭ সালের মে মাসের আগে তাদের আর সাক্ষাৎ হয়নি৷