বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: আজ ২৪ জুলাই। মহানায়ক উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) ৪৪ তম প্রয়াণবার্ষিকী। এই দিনে বাঙালি তাঁকে স্মরণ করে সপ্তপদী, নায়ক ইত্যাদি কালজয়ী ছবিগুলির আস্বাদ আরও একবার নেবে সে আর নতুন কথা কী! বছরের পর বছর ধরেই তো এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে। কিন্তু যেটা আজও অনেকেই জানেন না তা হল, একজন আদ্যন্ত ফুটবলপ্রেমী ছিলেন উত্তম কুমার। তাই বারেবারেই তাঁর ছোঁয়ায় একাকার হয়ে গিয়েছে সিনেমা এবং ফুটবল।
আরও পড়ুন: মুম্বইকে গুডবাই, রোহিত-সূর্যের পরবর্তী ঠিকানা কেকেআর নাকি দাদার দিল্লি?
‘ধন্যি মেয়ে’ ছবির কথাই ধরা যাক। শোনা যায়, পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে মহানায়ক (Uttam Kumar) নিজে অনুরোধ করেছিলেন যাতে কালীগতি দত্তের সর্বমঙ্গলা দলকে সবুজ-মেরুন জার্সি পরানো হয়। কারণ তিনি ছিলেন মোহনবাগানের একজন অন্ধ সমর্থক। এতটাই অন্ধ যে ১৯৭৭ সালে তিনি যখন মুম্বইতে ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত, সেই সময় ডেকে পাঠিয়েছিলেন গোটা মোহনবাগান দলকে। মোহনবাগান রোভার্স কাপ খেলতে মুম্বই গিয়েছিল। ফাইনালের আগের দিন মহানায়ক গোটা দলকে ডেকে ট্রফি জেতার আবদার জানিয়েছিলেন। পরের দিন বাবলুরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই আবদার রাখেন।
একজন মনেপ্রাণে মোহনবাগানী উত্তম কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে প্যাঁক দেওয়ার সুযোগও ছাড়তেন না। ১৯৭৬ সালের কলকাতা লিগ ডার্বিতে আকবরের গোলে লাল-হলুদদের হারিয়ে দিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। এর ঠিক পরেরদিনই ছিল ‘অবনমহল’ পত্রিকার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে বছরের সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হন উত্তম কুমার (Uttam Kumar) এবং বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ আগের দিনই পরাজিত হওয়া ইস্টবেঙ্গল দলের অন্যতম কুশীলব শ্যাম থাপা। এই অবস্থায় বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ অপূর্বলাল মজুমদার যখন শ্যামের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন, পাশ থেকে উত্তমকুমার টিপ্পনী কেটে বলেন, “কী, কাল হারিয়ে দিলাম তো!”
তবে শ্যাম থাপাকে প্যাঁক দিলেও মহানায়ককে নিজেকে একবার ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ জার্সি গায়ে গলাতেই হয়েছিল। ‘সপ্তপদী’ ছবির আইকনিক ফুটবল ম্যাচ মনে পড়ে? কৃষ্ণেন্দুর চরিত্রে উত্তম খালি পায়ে গোলের পর গোল দিয়েছিলেন সাহেবদের। এই দৃশ্যে অভিনয় করার সময় লাল-হলুদ জার্সি-ই গায়ে দিতে হয়েছিল মহানায়ককে। কারণ নায়িকা সুচিত্রা সেন ছিলেন কট্টর বাঙাল। তিনি কার্যত গোঁ ধরে বসেছিলেন যে যদি উত্তম লাল-হলুদ জার্সি না পরেন, তাহলে তিনি শ্যুটিংই করবেন না। নায়িকার মান ভাঙাতেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও বসুশ্রী সিনেমার মালিক মন্টু বসুর এনে দেওয়া ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরে অভিনয় করতে হয়েছিল মহানায়ককে।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/5eGwbh7XqkKR1mRr/?mibextid=qi2Omg
এভাবেই বারবার খেলাধুলো এবং সিনেমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। তিনি নিজেও কিন্তু খেলেছেন এককালে। ছোট থেকে বাড়ির সামনের লুনার ক্লাবে নিয়মিত ফুটবল চলত। পাশাপাশি কুস্তি শিখেছেন ববি ডায়াস ওরফে বিখ্যাত ভবানী দাসের কাছে। তারপর অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায়। তাছাড়া সাঁতার এবং লন টেনিসেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। মনে পড়ে, ‘বিচারক’ ছবিতে তাঁর টেনিস খেলার দৃশ্য? আসলে খেলাধুলা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে চিরকালই সচেতন ছিলেন উত্তম। শরীর ফিট রাখতে একবার চুনি গোস্বামীকে বাড়িতে পর্যন্ত ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। তাই আজ, ২৪ জুলাই শুধু মহানায়কের অভিনয়কেই নয়, তাঁর ক্রীড়াপ্রেমকেও শ্রদ্ধা জানানোর দিন।