বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: সাল ১৯২০। দিনটা ১ অগাস্ট। সুরেশ চন্দ্র চৌধুরীর নিমতলার বাড়িতে জন্ম নিল শিশুটি। ইস্টবেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাব (East Bengal)। যা ওপার বাংলা থেকে প্রাণ হাতে করে আসা রিফিউজিদে’র কাছে শুধু ক্লাব-ই নয়, বরং মায়ের সমান। প্রজন্ম আসে, প্রজন্ম যায়। কিন্তু ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই পরম্পরায় ঘটে না কোনও বদল। তবে প্রিয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে নিয়ে পূর্ববঙ্গীয়দের যত গর্বই থাকুক না কেন, ক্লাব প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে এক জাতিগত বিদ্বেষের ইতিহাস।
আরও পড়ুনঃ পশু চিকিৎসক থেকে ১৯১১ আইএফ শিল্ডজয়ের নায়ক, কেমন ছিল শিব ভাদুড়ীর যাত্রা
১৯১১ সালে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জেতা মোহনবাগান স্পোর্টিংয়ের ৮ জন ফুটবলার-ই ছিলেন পূর্ববঙ্গের। ১৯২০ অর্থাৎ অসহযোগ আন্দোলনের বছরে সেই তাদের নিয়েই ঘটে গেল এক চূড়ান্ত অনভিপ্রেত ঘটনা। কোচবিহার ট্রফির ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল মোহনবাগান এবং জোড়াবাগান। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন নিজেদের পূর্ববঙ্গীয় ডিফেন্ডার শৈলেশ বসুকে নামায়নি জোড়াবাগান। ম্যাচটি শেষপর্যন্ত হেরেও যায় তারা। আর এই হারের জন্য কেবলমাত্র দায়ী করা হয় আরেক পূর্ববঙ্গীয় ফুটবলার নসা সেনকে।
জোড়াবাগান ক্লাবের তৎকালীন সহ-সভাপতি ছিলেন সুরেশচন্দ্র চৌধুরী। তিনি নিজেও একজন পূর্ববঙ্গ নিবাসী। অচিরেই বুঝে যান, আসলে বাঙাল বিদ্বেষ থেকেই দুই ফুটবলারকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। প্রতিবাদে সেই মুহূর্তেই ক্লাব ত্যাগ করেন সুরেশবাবু। মাত্র তিনদিনের মধ্যেই তাঁর নিমতলার বাড়িতে জন্ম নেয় ইস্টবেঙ্গল স্পোর্টিং (East Bengal)। আজই সেই দিন। ১ অগাস্ট। আজ ইস্টবেঙ্গল দিবস।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/5eGwbh7XqkKR1mRr/?mibextid=qi2Omg
সারদারঞ্জন রায়কে বলা হয়, বঙ্গ ক্রিকেটের পথিকৃৎ। আবার তাঁকে বাংলার ডব্লিউ জি গ্রেস-ও বলা হয়। সুরেশবাবুর অনুরোধে সারদারঞ্জন রায় নয়া ক্লাবটির সভাপতির পদ গ্রহণ করলেন। পরবর্তী ১০০ বছরে অনেক জলই বয়ে গিয়েছে গঙ্গা দিয়ে। একাধিক ট্রফি এসেছে ক্লাবের ক্যাবিনেটে। জাতীয় লিগ, ফেড কাপ, ডুরান্ড কাপ, কলকাতা লিগ ইত্যাদি তো বটেই এমনকি অসিয়ান কাপও রয়েছে সেখানে। এমনকি এই বছরই সুপার কাপ জিতেছে দল। কিন্তু কখনওই মুছে যাবে না ক্লাবের জন্মের নেপথ্যে হিংসার ইতিহাস। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (East Bengal) এক জাতিগত বিদ্বেষের ফসল। এ কথা মুছে যাবে না কখনওই।