বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। এরা কী শুধুই দুটো ক্লাব নাকী? তাহলে কেন শোনা যায় “জয় মা মোহনবাগান” কিংবা “জয় মা ইস্টবেঙ্গল” ধ্বনি? শোনা যায় এই কারণেই, দুই ক্লাবের অবস্থান সমর্থকদের কাছে তাঁদের গর্ভধারিনীর ঠিক পরেই।
আর এইটিই মূলমন্ত্র। যা কেবল সাধারণ সমর্থক নয়, মেনে চলতেন খোদ মহানায়কও। ভুলি কী করে সর্বমঙ্গলা স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি কালীগতি দত্তর স্পোর্টিং স্পিরিট (ধন্যি মেয়ে)? কিংবা খালি পায়ে সাহেবদের গোলের পর গোল ঠুকে দেওয়া কৃষ্ণেন্দুর নির্মল হাসি (সপ্তপদী)?
আরও পড়ুন: Kolkata Derby: ইস্ট-মোহন দ্বৈরথ এবং সমর্থকদের বাক্যবাণ
হয়তো এতসব দৃশ্য থেকেই আন্দাজ করা যায় পর্দার বাইরেও কতখানি খেলা-পাগল ছিলেন উত্তম কুমার। হ্যাঁ, বাস্তবিকই তাই ছিলেন তিনি। বাড়ির সামনেই লুনার ক্লাব। ছোট থেকে সেখানে নিয়মিত ফুটবল চলত। ববি ডায়াস ওরফে বিখ্যাত ভবানী দাসের কাছে কুস্তি শিখে অংশ নিয়েছেন বেশ কিছু প্রতিযোগিতাতেও। এছাড়া, সাঁতার আর টেনিস তো ছিল তাঁর নিত্যকার অন্যতম কর্মসূচি। কিন্তু নিজের খেলাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর মোহনবাগানী সত্ত্বা।
শোনা যায়, ধন্যি মেয়ে ছবিতে পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে তিনি নিজে অনুরোধ করেছিলেন যাতে সর্বমঙ্গলা দলকে সবুজ-মেরুন জার্সি পরানো হয়। সাদা-কালো ছবি, রঙদুটি তাই ফোটেনি। সে অবশ্য অন্য কথা। আরও একটি গল্প আছে। সপ্তপদী ছবিতে কৃষ্ণেন্দুর লাল-হলুদ জার্সি গায়ে দৃশ্য মনে পড়ে? শোনা যায়, বসুশ্রী সিনেমার মালিক মন্টু বসু এই জার্সি এনে দেন। যা গায়ে দিতে মহানায়ক নাকী প্রথমে রাজিই হচ্ছিলেন না। তখন আবার কট্টর বাঙাল হিসেবে পরিচিতা সুচিত্রা সেন বেঁকে বসেন। উত্তমবাবু অন্য জামা পরে শুটিং করলে তিনি শুটিং করবেন না। অগত্যা নায়িকার মান ভাঙাতে নায়ককে ইস্টবেঙ্গলী সাজতে রাজি হতেই হল।
এতেই শেষ নয়। শরীর ফিট রাখার পরামর্শ দিতে একবার চুনী গোস্বামীকে বাড়ীতে পর্যন্ত ডেকে পাঠিয়েছিলেন উত্তমকুমার। এরপর ১৯৭৭ সালে যখন তিনি মুম্বাইয়ে আনন্দ আশ্রম ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত। ঠিক একইসময়ে মোহনবাগানও রোভার্স কাপ খেলতে হাজির হয় সেখানে। ফাইনালের আগের দিন মহানায়ক নাকি নিজে গোটা দলকে ডেকে চ্যাম্পিয়নশিপের আবদার জানিয়েছিলেন। পরের দিন বাবলুরা ট্রফি জিতে সে আবদার রেখেওছিলেন।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট মাঠে ঢোকা গেলেও আইএসএল দর্শকহীন, নেপথ্যে কোন রহস্য
একজন খাঁটি মোহনবাগানী হিসেবে বাঙালদের প্যাঁক দিতেও কম সিদ্ধহস্ত ছিলেন না উত্তমকুমার। সেটা ১৯৭৬ সাল। কলকাতা লীগ ডার্বিতে আকবরের দেওয়া গোলে লাল হলুদকে হারিয়ে দিয়েছে মেরিনার্স। ঠিক পরেরদিন ছিল “অবনমহল” পত্রিকার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। যেখানে সে বছরের সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হন উত্তমকুমার। অন্যদিকে আগেরদিনই পরাভূত ইস্টবেঙ্গল দলের অন্যতম কুশীলব শ্যাম থাপা বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ। ঠিক যখন বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ অপূর্বলাল মজুমদার তাঁর হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন, পাশ থেকে উত্তমকুমার টিপ্পনী কেটে বললেন, “কী, কাল হারিয়ে দিলাম তো!”