পূর্বাশা দাস: আবারও ‘বডি শেমিং’, ‘স্লাট শেমিং’ এর শিকার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সামাজিক মাধ্যমে শ্রীলেখার একটি ছবিতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন জনৈকা মহিলা।
‘বডি শেমিং’, ‘স্লাট শেমিং’ শ্রীলেখার কাছে নতুন কিছু নয় এর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক ডামাডোলের পরিস্থিতিতে অভিনেত্রী তথা বিজেপি নেত্রী রিমঝিম মিত্র পরোক্ষভাবে শ্রীলেখাকে ‘বডি শেমিং’ করেছিলেন। রিমঝিম সেই সময় নাম না করে শ্রীলেখাকে ‘থলথলে বৌদি’, ‘কমরেট মাংসপিন্ড’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই পোস্টের স্ক্রিনশট শ্রীলেখা নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে শেয়ারও করেছিলেন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের সম্মান দিয়ে মন জিতে নিলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র
তবে এবারের ঘটনার সূত্রপাত গতকাল শ্রীলেখা তাঁর ইনস্টা প্রোফাইলে একটি রিল শেয়ার করার পরে। সেই রিলের কমেন্টে পৌলোমী বিনয় জোশি নামের এক মহিলার ইনস্টা প্রফাইল থেকে কমেন্ট করা হয়, “স্ট্রাপটা খুলে ফেলো, আরও ভালো লাগবে, আরও বডি শো অফ হবে।” এহেন কুরুচিকর তির্যক মন্তব্যের বিরুদ্ধে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাল্টা দিয়েছেন শ্রীলেখাও। শ্রীলেখা লিখেছেন, “কেন বলুন তো? আপনার পরতে ইচ্ছে করছে বুঝি? কিন্তু পারছেন না, বুঝি জ্বালাটা।”
এই কমেন্ট এবং পাল্টা কমেন্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে শ্রীলেখা মনে করিয়ে দেন মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার বিশেষজ্ঞ তিনি নন। কিন্তু তাঁর বিশ্লেষণাত্মক মনন থেকে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করা নারীদের মনের জ্বালাটা বোঝেন অভিনেত্রী। এই মহিলার প্রতি মোটেও সংবেদনশীল নন শ্রীলেখা। তিনি আরও উল্লেখ করেন শুধুমাত্র পুরুষরাই যে ‘বডি শেমিং’ বা ‘স্লাট শেমিং’ করেন তা নয়, এক্ষেত্রে মহিলারাও পিছিয়ে নেই। অপর অভিনেত্রী রিমঝিম মিত্রের করা বডি শেমিং এর কথাও উল্লেখ করেছেন শ্রীলেখা।
আরও পড়ুন: এক্সক্লুসিভ: প্রয়াণ দিবসে মহানায়কের নাতবৌ অভিনেত্রী দেবলীনা কুমারের ‘উত্তম-কথা’
এ প্রসঙ্গে খাস খবরকে শ্রীলেখা বললেন, “এটা পুরোটাই একটা সাইকোলজিক্যাল বিষয়। অনেক মহিলাই বাড়িতে শাড়ি পরেন। শাড়ি পরা নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। শাড়ি আমারও খুব প্রিয় পোশাক। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি বাড়িতে শাড়ি পরে থাকতে স্বচ্ছন্দ নই। বাড়িতে শর্টস্, আর যে স্ট্রাপ নিয়ে কথা বলা হয়েছে ওইরকম স্ট্র্যাপি টিশার্ট পরে থাকতে আমি কমফোর্টেবল ফিল করি। এই সমস্ত মহিলারা যারা এই ধরনের কমেন্ট করেছেন তারাই দীঘা, পুরী, মন্দারমণি গিয়ে এই ধরনের পোশাক পরে প্রচুর ছবি তোলেন। আসলে সমাজ কী বলবে, পরিবার কী চোখে দেখবে বা নিজেদের মনের মধ্যে কিন্তুবোধ থেকে তারা সব সময় সব পোশাক পরতে পারেন না। কিন্তু তাদের এই ধরনের পোশাক পরার ষোলোআনা সুপ্ত ইচ্ছে মনের মধ্যে থাকে।”
শ্রীলেখা আরও যোগ করলেন, “এটা যারা করেন তারা হয়ত নিজের জীবনে চরম হতাশাগ্রস্থ। তাই একজন সাকসেসফুল মহিলার সাকসেসটা মেনে নিতে তাদের খুব অসুবিধা হয়। তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকলে এরকম মন্তব্য করতে পারেন না। শুটিংই আমার একমাত্র কাজ নয়। আমি লেখালেখি করছি, আমার ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। আমি দুবছরের মধ্যে আমার চ্যানেলটা দাঁড় করিয়েছি। আমি বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। তাই কারোর ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। আমি বলব কারোর পোশাক অপছন্দ হলেই সেখানে কুরুচিকর মন্তব্য করতে হবে, এটা ঠিক নয়। অনেকেই ইচ্ছাকৃত ভাবে পেট বার করে, বক্ষ বিভাজিকা দেখিয়ে শাড়ি পরেন। সেটা আমার অপছন্দ হলে আমি সিম্পলি এড়িয়ে যাব। আসলে সর্বস্তরের মানুষেরই একটা অবক্ষয় হয়েছে। সাধারণ মানুষেরা যেমন সেলিব্রিটিদের খারাপ কথা বলছেন সেরকম সেলিব্রেটিরাও সেলিব্রিটিদের খারাপ কথা বলেন। এটা থেকে নিজেদের বাঁচাতে গেলে উন্নতির পথ খুঁজে পাওয়া দরকার।”
বহু কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। তাঁর চেহারার গড়ন নিয়েও ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। সেগুলির সোজাসাপটা জবাব দেন অভিনেত্রী। এগুলি করে হেটার্সরা কখনওই শ্রীলেখার মনোবল ভাঙতে পারেনি। এহেন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়চেতা মনোভাবের জন্য নেটিজেনরা কুর্নিশ জানান শ্রীলেখাকে।