
অর্পিতা দাশগুপ্ত: পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে মাতৃপক্ষের সূচনা হয় মহালয়ায়। এই বিশেষ দিনে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে জল ও পিণ্ড দান করা হয়। এই প্রথা ছেলেদের পালন করতেই দেখা যায়। তবে কি মেয়েরা তর্পণ করতে পারবে না। কি বলছে শাস্ত্র? জেনে নিন……
আরও পড়ুন: মহালয়া শুভ না অশুভ, শাস্ত্রমতে কি গুরুত্ব এই দিনের, জেনে নিন বিস্তারিত
হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে, তর্পণের ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও সমান অধিকার। মৃত পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা যে কোনও ব্যক্তিই তর্পণ করতে পারবে। মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকলে তাঁর মেয়েই শ্রাদ্ধের কাজ করতে পারবে। কোনও ব্যক্তি অবিবাহিত থাকলে সেক্ষেত্রে তাঁর মা বা বোন দায়িত্ব পালন করবেন। এমনকি, রামায়ণেও উল্লেখ আছে, অযোধ্যার রাজা দশরথের মৃত্যুর পর রামের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী সীতা পিণ্ডদান করেছিলেন।
ধর্মীয় মত অনুসারে, পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ, তর্পণ, ইত্যাদি মৃত্যু সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তাই একাংশের মতে, এই দিনে কোনও শুভ কাজ করতে নেই। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, মহালয়ার দিন তর্পণ করলে পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্তি পায়, তাহলে এই তিথি অশুভ হয় কি করে? যদিও এই শুভ-অশুভ নিয়ে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে।
পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণই হল মহালয়া। এই দিনের দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মার বরে অমর মহিষাসুরকে পরাজিত করতে কোনও নারীশক্তিকেই প্রয়োজন ছিল। অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দেবতাদের আবেদনে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ব্রহ্মাণ্ডের এই ত্রিশক্তি মহামায়ারূপী দেবী দুর্গার সৃষ্টি করেন। এই নারীশক্তিই দেবতাদের প্রদান করা অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করে। প্রচলিত আছে, মহালয়াতে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির সঞ্চার হয়।
আরও পড়ুন: শহরের দুর্গাপুজোয় এবার বিশাল চমক, এই মণ্ডপে বসছে ১২ ফুটের অষ্টধাতুর প্রতিমা
কেবল পিতৃপুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তর্পণ মন্ত্রে উল্লেখ আছে, ‘যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ।’ যার অর্থ, ‘বন্ধু ছিলেন কিংবা বন্ধু নন অথবা জন্মজন্মান্তরে বন্ধু ছিলেন তাঁদের জলের প্রত্যাশা তৃপ্তিলাভ করুক।’ রীতি অনুযায়ী, ‘ মহালয়ার দিনে ঋষি তর্পণ, দিব্য পিতৃ তর্পণ, দেব তর্পণের সঙ্গে থাকে রাম তর্পণ ও লক্ষণ তর্পণ।’
শাস্ত্রমতে এই বিশেষ দিনের কি গুরুত্ব:
পঞ্জিকা মতে, মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সেই সময়েও সংকল্প করে দুর্গাপুজো করা যায়, যাকে বলে প্রতিপদ কল্পরম্ভা। এই তিথিতেই রাবণ বধের আগে দেবীর অকাল বোধন করেছিলেন রামচন্দ্র। পরবর্তীতে এই পুজো বাসন্তী পুজো নামেই প্রচলিত হয়। এছাড়া, পুরাণ মতে, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে এমন তিথির গুরুত্ব অবশ্যই অপরিসীম হতে হবে।