মিলন পণ্ডা, এগরা: প্রাপ্য টাকা চাইতে গিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের কোপে পড়ে বয়কটের শিকার একটি অসহায় পরিবার৷ এমনকি গা-জোয়ারি করে কেটে দেওয়া হয়েছে ওই পরিবারের বিদ্যুতের সংযোগ, সরকারি পানীয় জলের লাইন৷ দোকান ও বাজার হাটে যাওয়ার ওপরও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ কারও অভিযোগ নয়, রীতিমতো গ্রামে মাইকিং করে বয়কটের হুলিয়া জারি করা হয়েছে৷ শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যের এহেন ফতোয়ার জেরে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবারটি৷ টাকা দিলেও ভয়ে কেউ তাঁদের কোনও জিনিস বিক্রি করতে চাইছেন না৷
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা ১ ব্লকের জুমকি গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিগেড়িয়া এলাকার ঘটনা৷ ঘটনার জেরে এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য৷ ভয়ে, আতঙ্কে স্থানীয়রা মুখ খুলতে চাননি৷ তবে বয়কটের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য বিমল নায়েক৷ তাঁর দাবি, “আমি কোনও বয়কট করিনি। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বয়কট করা হয়েছে৷” পঞ্চায়েত সদস্যের এই আচরণে ক্ষুব্ধ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বরাও৷ বিষয়টিকে সামনে রেখে শাসকের ‘বদলার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির৷
সূত্রের খবর, এগরা ১ ব্লকের জুমকি গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিগেড়িয়া এলাকায় অশোক ভট্ট চুক্তিভিত্তিতে চাষের ব্যবসা করেন। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে চুক্তিভিত্তিতে চাষের কাজ করেছিলেন। অশোকের অভিযোগ, কাজ শেষে নিজের প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে পঞ্চায়েত সদস্য বিমল নায়েকের ছেলে দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে চড়াও হয়। আমার বৌমার গলায় লাইলন দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করে ও শাড়ি ব্লাউজ ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করে৷’’
চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা ছুটে এলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়৷ অশোকের দাবি, ‘‘থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চাইনি৷ পরে চাপের মুখে অভিযোগ নিলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেনি৷ উল্টে অভিযোগ তুলে দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সদস্য বিমল নায়ক সহ আত্মীয়-পরিজনরা চাপ দিতে থাকে।তাতে রাজি না হওয়ায় ওরা আজ থেকে আমার পরিবারকে বয়কট করেছে৷ বিদ্যুত ও পানীয় জলের লাইন কেটে দিয়েছে৷ রীতিমতো গ্রামে মাইকিং করে হুলিয়া জারি করেছে৷’’
তবে দলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের এহেন ‘দাদাগিরি’কে দল প্রশ্রয় দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা এগরার বিধায়ক তরুণ কুমার মাইতি। তিনি বলেন, ” বিষয়টি পুলিশকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জানিয়েছি। অভিযুক্তের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছি। সভ্য দেশে এরকম কোনও হুলিয়া কেউ জারি করতে পারে না৷” যদিও এই ঘটনায় শাসকের ‘বদলার রাজনীতি’ দেখছে বিজেপি৷ দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন ” তৃণমূল কংগ্রেস এখন মধ্যযুগীয় বর্বরতা রাজ শুরু করেছে। তাই যেখানে সেখানে হুলিয়া জারি করছে। পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের মধ্যে কি না আমার সন্দেহ রয়েছে!’’ পুলিশের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷
আরও পড়ুন: বিহারে দেখা মিলল গোপাল ভাঁড়ের, ভিরমি খাওয়ার জোগাড় Nitin Gadkari