বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের। আর এইজন্য সমালোচকদের বাণে সবথেকে বেশি বিদ্ধ হতে হয়েছে দলের সবথেকে অভিজ্ঞ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি সাকিব নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। আগামী তিন মাস দেখবেন তিনি। এরপর জানাবেন নিজের সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বিশ্বকাপ বসানো বিশেষ কেক দিয়ে সংবর্ধনা Team India কে
প্রশ্নটা এখানেই। যেখানে রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো সিনিয়ররা অবসর নিতে দু’বার ভাবছেন না, সেখানে সাকিব এখনও কেন তিন মাস দেখতে চান? তাহলে কি তিনি এখনও আশা রাখছেন আগামীদিনে দেশের জন্য বড় কিছু করতে করতে পারবেন? এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর ক্রিকেট লিগে যোগ দিয়েছেন সাকিব। লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলবেন তিনি। উড়ে যাওয়ার আগে সাকিবের কথায়, “নিজেকে নিয়ে সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই এখনও। মেজর লিগ খেলব। এরপর কানাডায় গ্লোবাল টি-লিগ আর তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ আছে। তাই আমার মনে হয়, আপাতত তিন মাস বা ছয় মাসের পরিকল্পনা করাই ভাল।”
সাকিবের কথা থেকেই পরিষ্কার, এখনও আশা ছাড়তে নারাজ তিনি। অবশ্য তা তিনি করতেই পারেন। নিজের কেরিয়ার নিয়ে ভালমন্দ ভাবার সবথেকে বেশি অধিকার তাঁর নিজেরই। কিন্তু সাকিব যদি খেলা চালিয়ে যান তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কতটা লাভবান হবে এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। একজন সিনিয়র জায়গা দখল করে রাখা মানে দেশের একজন প্রতিশ্রুতিমানকে বঞ্চিত করা। বিশ্বকাপ জেতার পরেও বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি’কে আলবিদা বলেছেন ঠিক এই কারণে। তাহলে সাকিবের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? এর কারণ কি শুধুমাত্র এটাই যে পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে আইকনের আকাল?
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সবকটি বিশ্বকাপেই অংশ নেওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র দুই। ভারতের হয়ে রোহিত শর্মা এবং বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। বর্তমানে দুজনের বয়সই ৩৭। কিন্তু সাকিব কি মনে করছেন, দু’বছর পর যখন তার বয়স হবে ৩৯, সেই সময়ও ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে দেশের হয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে নামতে পারবেন তিনি? যদি তাই হয় সেটা তার ভ্রম ছাড়া কিছুই নয়।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংক: https://www.facebook.com/share/5eGwbh7XqkKR1mRr/?mibextid=qi2Omg
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন বীরেন্দ্র সেহবাগ তোপ দেগেছিলেন সাকিবের বিরুদ্ধে। সাকিবের দলে থাকা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন নজফগরের নবাব। যে প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে সাকিবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “Who?” কিন্তু সাকিবের সাম্প্রতিক বক্তব্যে প্রশ্নটা তো আর “Who” থাকছে না। “Why” হয়ে যাচ্ছে।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচ সেরার পুরস্কার ছাড়া সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে আর কী পেয়েছেন সাকিব যা তিনি বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতে পারবেন? আফগানদের বিরুদ্ধে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন ১১৬ তাড়া করতে হবে ১২ ওভারে সেই ম্যাচে ১ বল খেলেই ফিরে গিয়েছেন সাজঘরে। ভারতের বিরুদ্ধে অধিনায়ক রোহিত শর্মার উইকেট ছাড়া আর কী অবদান আছে তাঁর? আসলে প্রকৃত গ্রেটদের সঙ্গে তথাকথিতদের ফারাক শুধু এক জায়গাতেই। প্রকৃত গ্রেটরা জানেন কখন ছাড়তে হয়। সে কারণেই ফাইনাল বাদে সারা টুর্নামেন্ট জুড়ে চূড়ান্ত ফ্লপ কোহলি বিশ্বকাপ জিতেও অনায়াসে ছাড়তে পারেন দলে দখল করে রাখা জায়গাটা। কিন্তু তথাকথিত বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব পারেন না। বিরাট সাকিবের থেকে বছর দেড়েকের ছোট। তবু তিনি পারেন কিন্তু সিনিয়র হয়েও সাকিব পারেন না।