বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: চোকার্স। অর্থাৎ চোক করে মানে আটকে যায় যে। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলকে বলা হয় সর্বকালের সেরা চোকার্স। তবে চোকার্স হিসেবে আজ ভারতও নেহাত পিছিয়ে নেই। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে প্রথমবারের মত ‘চোকার্স’ আখ্যা পেয়েছিল সৌরভের দল। বিগত ১০ বছরে তকমাটা গায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সেঁটে গিয়েছে।
গত এক দশকে মোট ৯ বার নকআউটে গিয়ে মুখ পুড়েছে টিম ইন্ডিয়ার। যার মধ্যে ৫টিই ফাইনাল। শনিবার আবার একটি ফাইনাল। আর এবারে প্রতিপক্ষ আরেক চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, যার হাতেই দিনের শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি উঠুক, এক দলের নামের পাশে চোকার্স তকমাটি মুছে যেতে চলেছে। আর অন্য দলটি আরও একবার হাতেগরম প্রমাণ দেবে, সত্যিই তারা চোকার্স।
আরও পড়ুনঃ জীবন সকলকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না, রোহিত
১৯৯৮ সালে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বে আইসিসি নক আউট ট্রফি জিতলেও প্রোটিয়ারা যে চোকার্স সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত-ই নেই। যদিও তাদের চোকিং শুরু হয়েছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কুখ্যাত ‘রেইন রুলে’র কারণে বিদায় নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এরপর ১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টাই করে তারা। কিন্তু প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে যেহেতু অজিরা তাদের গ্রুপ লিগের ম্যাচে হারিয়েছিল, তাই বিদায় নিতে হয়। এরপর অবশ্য লাগাতার আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউটে দৃষ্টিকটুভাবে চোক করে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ২৪ ওভারে ১০৮/২, এই অবস্থা থেকে মাত্র ২২২ রানও তাড়া করতে পারেনি।
বার্বাডোজের বারবেলাতেও এই অতীতগুলো দুঃস্বপ্নের মত এইডেন মার্করামদের তাড়া করতেই পারে। বিশেষ করে, যদি তাদের পরে ব্যাট করে রান তাড়া করতে হয়। কারণ, শুধু আইসিসি প্রতিযোগিতায় নয়, দ্বিপাক্ষিক সিরিজেও রান তারা করতে গিয়েই সমস্যায় বেশি পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি বিশ্বকাপেও এর অন্যথা ঘটেনি। প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১০৪ তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেট খুইয়েছিলেন মার্করামরা।
ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালেও একই ঘটনা ঘটবে কি? রোহিত শর্মা যে টসে জিতলে প্রথমে ব্যাট করে নিতে চাইবেন, সে কথা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়। ফাইনালের মত মঞ্চে সব দলই চায় স্কোরবোর্ডে রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে। একে বলে, স্কোরবোর্ড প্রেসার। তাছাড়া প্রথমে ব্যাট করে ১৭০-৮০ তুলে ফেলা তারপর বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বুমরাহ্-অক্ষরদেরকে লেলিয়ে দেওয়া, এটাই চলতি বিশ্বকাপে টিম রোহিতের ফর্মূলা।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/utMoUiiv31FCHMCN/?mibextid=qi2Omg
তবে নকআউটে চোকার্সদের বিরুদ্ধেও রেকর্ড খুব একটা আশাপ্রদ নয় মেন ইন ব্লু’র। নিউজিল্যান্ড আজ অবধি মাত্র দুটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জিতেছে। দুবারই ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। এছাড়া আর যতবার ফাইনাল খেলেছে কিউইরা, একবারও ট্রফি ছুঁতে পারেনি তারা। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা চোকার্স হলেও এবারের দলটিকে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দেশের একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তিনিই। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। অর্থাৎ সবমিলিয়ে বার্বাডোজের ফাইনালের আগে চাপে থাকবে দুই দলই। কারা নিজেদের নার্ভ শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে, হবে তারই পরীক্ষা।