
বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: আরেকটু হলেই হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল প্রতিটি ভারতবাসীর। ১৮৫ তাড়া করতে নেমে ৭ ওভারে বাংলাদেশ তখন বিনা উইকেটে ৬৬। অ্যাডিলেডে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল ঠিকই কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল না। ঝড়টা ২২ গজে তুলেছেন ওপেনার লিটন দাস। ঠিক এমন সময় ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি। ব্যস্ খেলা বন্ধ।
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস চিকিৎসকের, পুলিশের দ্বারস্থ নার্স
এরপরই টিভির পর্দায় যে তথ্য ভেসে উঠল তাতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম সকল ভারতীয়ের। টিভিতে দেখাচ্ছে, ডিএলএস পদ্ধতি অনুসারে ১৭ রান এগিয়ে রয়েছে টাইগাররা। সর্বনাশ! তাহলে কি ১৮৪ তুলেও শেষরক্ষা হল না? শেষরক্ষা শেষমেশ হল-ই। আর মুখের গ্রাস আরেকটু হলে যে ছিনিয়ে নিচ্ছিল, সেই বৃষ্টির হাত ধরেই হল।
বৃষ্টি থামতেই ডিএলএস পদ্ধতি অনুসারে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের সামনে লক্ষ্যটা দাঁড়াল ৫৪ বলে ৮৫। কুড়ি-বিশের সাম্রাজ্যে যা কিছুই নয়। তাও আবার হাতে পুরোপুরি ১০ উইকেট। কিন্তু ক্রিকেট খেলাটাই যে মোমেন্টামের খেলা। মোমেন্টামে একবার বিঘ্ন ঘটলে ম্যাচের মোড় ঘুরতেও বেশি সময় লাগে না। বুধবার অ্যাডিলেডেও অন্যথা হল না। যে খেলা ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচেই ১৫১ তাড়া করতে নেমে ১৪৫/৬ এ আটকে গেল তারা।
অভিশাপ নয়, অ্যাডিলেডের আকাশে জমে থাকা মেঘ আশীর্বাদ হয়েই বর্ষাল রোহিত শর্মার দলের ওপর। একে তো দীর্ঘ বিরতির জেরে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের মোমেন্টাম বিঘ্নিত হয়, অনুঘটকরূপে দেখা দিল বৃষ্টির জেরে সৃষ্ট আর্দ্রতা। এই আর্দ্রতায় অর্শদীপ-শামি-হার্দিকের মুখোমুখি দাঁড়াতেই পারলেন না সাকিব আল হাসানেরা। যদিও ৬ উইকেট হারানোর পরও শেষ মুহূর্তে লড়াই চালানোর চেষ্টা করলেন নুরুল হাসান এবং তাস্কিন আহমেদ। কিন্তু লাভ কিছুই হল না। সবথেকে বড় কথা, পুনরায় খেলা শুরু হওয়ার পর একটিও ক্যাচ ফস্কাননি ভারতীয় ফিল্ডাররা।
তবে এই ম্যাচ জিতেও কি স্বস্তিতে থাকতে পারবে টিম ইন্ডিয়া? ডাকওয়ার্থ আর লুইস সাহেবের কারিকুরিতে আরেকটু হলেই ম্যাচ খোয়াতে হচ্ছিল রোহিত শর্মাদের। কিন্তু সেই দায় কি শুধুমাত্র ভাগ্যের ঘাড়ে বর্তানো চলে? পাওয়ার প্লে নষ্ট হয় হোক, প্রথম দিকে দেখে খেলে পরে হাত চালাব, এই হল বর্তমানে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র। যদি আর খেলা না হত, যদি বাংলাদেশ সে সময় ডিএলএস পদ্ধতিতে জিতে যেত, তাহলে কিন্তু এই স্ট্র্যাটেজি-ই সবার প্রথমে কাঠগড়ায় উঠত। পাওয়ার প্লেতে ভারতের রান একটু বেশি থাকলে টোট্যালটা-ও বেশি হয়, সেইসঙ্গে ডাকওয়ার্থ লুইসে-ও বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকে।
যদিও প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। পাওয়ার প্লেতে বড় রান উঠবে কি করে? অধিনায়ক-ই তো চতুর্থ ওভারে ফিরে গেলেন। খেল দেখাচ্ছেন বটে রোহিত। সবাই রাহুলকে নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে রোহিত চুপিচুপি ঠিক নিজের কাজ করে চলেছেন। তৃতীয় ওভারে তাঁর ক্যাচ ফস্কেছিলেন হাসান মাহমুদ। কয়েক মুহূর্ত পর সেই হাসান মাহমুদকে-ই উইকেট কার্যত উপহার দিলেন রোহিত। চলতি বিশ্বকাপে ভারত অধিনায়কের অবদান যথাক্রমে ৪, ৫৩, ১৫, ২। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসটি এসেছে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। নেতৃত্ব যে রোহিতের হিটম্যানসুলভ ব্যাটিংয়ে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে এখন আর কোনও সন্দেহ-ই নেই। উল্টোদিকে কে এল রাহুল অবশ্য ফর্মে ফিরলেন অবশেষে। ৩২ বলে ৫০।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
সেইসঙ্গে চলতি প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে তৃতীয় অর্ধশতক বিরাট কোহলির-ও। মজার বিষয় হল, চলতি বিশ্বকাপে যতবার-ই ৫০ এর কোঠা পেরিয়েছেন কোহলি, বোলার আউট করতে পারেনি তাঁকে। এদিন ৪৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত রয়ে গেলেন। বিরাট আছেন বলেই বোধহয় বিশ্বজয়ের স্বপ্নটা এখনও জীবিত ভারতীয় সমর্থকদের মনে।