বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: দেশকে দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বজয়ী করেছেন ‘রো-কো’ জুটি। কিন্তু শিরোপা জয়ের থেকেও প্রতিযোগিতাকে বেশি স্মরণীয় করে রাখলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে আলবিদা জানিয়ে। ভারতের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে আর দেখা যাবে না বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাদেজাকে। আর প্রশ্ন উঠছে এখানেই। বিদায়ের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের থেকে ভাল মুহূর্ত আর হয় না, এই কারণেই কি ট্রফি জিতে তড়িঘড়ি অবসর ঘোষণা করলেন ত্রয়ী? নাকি কারণটা গৌতম গম্ভীর যাঁর টিম ইন্ডিয়ার কোচ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা?
আরও পড়ুনঃ দেশকে ট্রফি জিতিয়েও বাদ পড়লেন কোহলি, বিশ্বকাপের সেরা একাদশে কজন ভারতীয়
২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক গম্ভীর এমন একজন মানুষ যিনি নিজের দায়িত্বের সঙ্গে কখনওই আপোষ করেন না। তাতে যদি ১০ জন মানুষের কাছে খারাপ হতে হয় তাতেও না। তিনি প্রয়োজনে দলের জন্য প্রাণপাত করে দেবেন কিন্তু তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এই কারণেই গম্ভীর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শর্ত দিয়েছেন ভারতীয় বোর্ডকে। যদি বিরাট, রোহিত, জাদেজা, শামির মত সিনিয়ররা ২০২৫ সালে দেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতাতে না পারেন, তবে তাঁদেরকে বাদ পড়তে হবে।
রোহিতরা কিন্তু ভাবী কোচের শর্ত আগেভাগেই পূরণ করে দিলেন। ১৩ বছর পর বিশ্বকাপ শিরোপা এবং ১১ বছর পর আইসিসি ট্রফি এনে দিলেন দেশকে। এই সাফল্য যেন গম্ভীরের শর্তের বিরুদ্ধে তাঁদের স্টেটমেন্ট। তবু পরপর তিন তারকার অবসর ঘোষণা ভাবতে বাধ্য করছেই ক্রিকেটপ্রেমীদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফাইনালে ম্যাচের সেরা হয়েছেন বিরাট। সেই পুরস্কার নিতে গিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। এরপর ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে এসে অধিনায়ক রোহিত অবসরের কথা জানান। সবশেষে জাদেজা। তিনি অবশ্য একদিন সময় নিয়েছেন। শনিবার বিশ্বজয়ের পর রবিবার টি-২০ আন্তর্জাতিক থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে জানিয়ে দেন জাড্ডু। সব মিলিয়ে ঘুরেফিরে প্রশ্নটা চলে আসছে বারবারই। তবে কি গম্ভীরকে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা? সে কারণেই ট্রফি জিতে বিদায় জানানোটাই শ্রেয় মনে করছেন?
প্রশ্নটা আসছে এই কারণেই, একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শনিবার ম্যাচ শেষে রোহিতকে সরাসরি বলতে শোনা গিয়েছে যে তিনি এখনই অবসর নিতে চাইছিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে নিতে হচ্ছে। কোন পরিস্থিতি? তবে কি গৌতম গম্ভীরের কথাই বলতে চাইলেন ভারত অধিনায়ক? অন্যদিকে বিরাট কোহলির সঙ্গে গৌতম গম্ভীরের দ্বৈরথের কথা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া জানে। আইপিএলের মঞ্চে উভয়ের সংঘর্ষের ছবিটা বারেবারে জনসমক্ষে এসেছে। গত ২০২৩ আইপিএলেও আফগানিস্তানের তরুণ বোলার নবীন উল হককে কেন্দ্র করে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কোহলি-গম্ভীর। তাছাড়া কোহলি অধিনায়ক থাকাকালীনই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন গৌতম। বলা ভাল, তেমন একটা সুযোগ না পেয়েই। ফলে তিনি কোচ হতে পারেন, এই খবর চাউর হওয়ার পরই সংশয় ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। গম্ভীর কোচ হয়ে এলে কোহলি তাঁর সঙ্গে কাজ করবেন কী করে, এই প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে বারংবার তুলেছেন নেটাগরিকরা।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/UqF1b7TViFyvfPhN/?mibextid=qi2Omg
কোহলি, রোহিত, জাদেজার পরপর অবসর ঘোষণা স্বভাবতই প্রশ্নটাকে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে। তবে এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। তিনজনই শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছেন। ওয়ানডে এবং টেস্ট খেলবেন। আর এই দুই ফর্ম্যাটেও তো থাকবেন গম্ভীর। তাহলে কি খুব তাড়াতাড়ি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই গুডবাই জানাবেন কোহলিরা? নাঃ, প্রশ্নটা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেশতঃ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর কী ঘটতে চলেছে, সে কথা বলা সত্যিই মুশকিল। হয়ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্তই মেয়াদ রোহিত-কোহলিদের। গম্ভীর যে নীতিতে বিশ্বাসী তাতে এরপর কী হবে, কেউ জানে না।