বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: দৃশ্য ১: ফিরোজ শাহ কোটলা, ২০১৫। ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করছে প্রোটিয়ারা। লক্ষ্যমাত্রা ৪৮১। উইকেট মোটেই মন্থর নয়। তবুও যা সহজলভ্য নয় জেনে পুরাকালের সুবিখ্যাত রীতিতে ফিরে গিয়েছিলেন আমলরা। ব্লকাথন।
শুরুটা হাসিম আমলাই করেছিলেন। আমলা ফিরে যাওয়ার পর তিনি। সাকুল্যে ৩৫৪ মিনিট ক্রিজে ছিলেন। অশ্বিনের বলে জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরে গেলেন, নামের পাশে ২৯৭ বলে ৪৩।
আরও পড়ুন: অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাসিত ব্রাজিন্টিনা ম্যাচের দুই রেফারি
দৃশ্য ২: এটিও ২০১৫, কিন্তু আগের ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচ খেলছে তাঁরই নেতৃত্বাধীন দল। ম্যাচের অবস্থা? ৩৮.৩ ওভারে দল যখন ২৪৭/১, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর আগমন।
এরপর মাত্র ৪৪ বল খেলে ফিরে গেলেন ৫০তম ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে। উল্টোদিকে হাসিম আমলা সে মুহূর্তে ১৪০ বলে ১৫৩ অপরাজিত। তিনি? বেশি না, মাত্র ১৪৯।
আর যেটা বলা দরকার। এটা অবশ্য তৃতীয় দৃশ্য হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় দৃশ্যের সঙ্গে সাজুয্যের কারণে তার আর প্রয়োজন বোধ করছি না। দ্বিতীয় দৃশ্যের ঠিক ৪০ দিন পরের ঘটনা এটি। প্রতিপক্ষ সেই একই— ক্যারিবিয়া। এবারে তিনি— ৬৬ বলে ১৬২ অপরাজিত।
ওপরের দৃশ্য তিনটি অবতারণা করার কারণ কিছুই নয়। চরিত্রটি বিশ্লেষণ করার আগে একটি সম্যক ধারণা দিয়ে রাখা। অবশ্য বিশ্লেষণ করারই বা আছেটা কী? সুবিশাল ক্রিকেট মহাবিশ্বে তো কতশত তারকা! কিন্তু শক্তিশালী অণুবীক্ষকের সাহায্য নিলেও কেবল এই একজনেরই সন্ধান মিলবে, যিনি ‘মেন ইন ব্লু’র সামনে নামলেও কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী তাঁর উইলো ঘোরানো দেখতেই বেশি উৎসুক। হ্যাঁ, বরং সময় বিশেষে তাঁকে সাজঘরে ফিরতে দেখেই ভারাক্রান্ত হয় হৃদয়।
আপনি কী একজন আদ্যন্ত ক্রিকেটভক্ত? যদি হন, একবারও মনে হয়না, কী করে এটি সম্ভব? সম্ভব একটি কারণেই। আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি’ভিলিয়ার্স তো আর যে কেউ হতে পারেন না। পারেন একজনই। যাঁর গুণাবলী লিখতে বসলে একটি “উইজডেন” হয়ে যায়। কিংবা হয়তো একটি “মহাভারত”ই।
যেমন, কম্পাসের সাহায্যে পেন কিংবা পেন্সিলটাকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো— কোনও ব্যাপারই না। যে কেউই পারবেন। কিন্তু কোনও কম্পাস ছাড়াই নিখুঁতভাবে ক্রিকেট ব্যাটটাকেও যে যায়, তা এবি না থাকলে কার ধারণায় আসত?
আসলে চরিত্র তো নয়। যেন স্বয়ং একটি যুগ। যার অবসান ঘটে গেল শুক্রবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে “বাই বাই” বলেছিলেন আগেই। সবেধন নীলমণি বলতে ছিল আইপিএল ইত্যাদি ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। শুক্রবার থেকে সেখানেও বন্ধ হয়ে গেল ব্যাট ঘোরা। টুইটারে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করে দিলেন এবি ডি’ভিলিয়ার্স।
আরও পড়ুন: ফের নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন সাংবাদিক নভি কাপাড়িয়া
অনেকে অবশ্য ভাবছেন, তিনি আবার ফেরত আসবেন। যেমন আগেও এসেছেন। কী করবেন, তাঁর ব্যাপার। আপাতত দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য শুভকামনা। আর সদ্য অন্ত হওয়া যুগ ফিরে দেখার পালা।