
খাস খবর ডেস্ক: ২৩ মার্চ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর। আক্ষরিক অর্থে দেখতে গেলে তফাৎটা ৬ মাস ১ দিনের। সত্যিই কী তাই?
পোর্ট অফ স্পেনে রাহুল দ্রাবিড়দের বিশ্বজয়ের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছিল ২৩ মার্চ। সেখান থেকে এই ৬ মাস ১ দিনেই সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে পৌঁছে যাওয়া। সালটা ২০০৭। ভারতীয় ক্রিকেট দেখেছিল, দুঃস্বপ্ন কীভাবে বদলে যায় রূপকথায়। আজ যদিও ভাবতে বসলে একটা কথাই বারবার মনে হয়। সত্যিই কী কথা ছিল রূপকথার?
এখন ভারতীয় ক্রিকেটারদের জোয়াল টানছেন। সেই রবি শাস্ত্রীও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফেভারিট মানতে চাননি দেশকে। কেন মানবেন? মাস ছয় আগের বিশ্বকাপ-ঘা তখন যে একেবারেই দগদগে। তার ওপর এখানেও ভজঘট আরম্ভ। গ্রুপ লিগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি জিততে না পারা, সুপার এইটের প্রথম ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হার— এসবই ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছিল দলটাকে।
আরও পড়ুন: করোনার দুঃস্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভেঙ্কটেশ
কিন্তু মারটা যে চিরকাল শেষরাতেই দিয়ে থাকেন ওস্তাদরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডু অর ডাই গেমেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। সেই ম্যাচেই বীরু-গৌতির সেই ১৩৬ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ। মধুরেণ সমাপয়েৎ হিসেবে যুবির এক ওভারে ছয় ছক্কাসহ দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড।
বিশ্বজয়ের টোনটা কী সেদিনই সেট হয়ে গিয়েছিল? নিশ্চয়ই তাই। যদিও অমর হয়ে থাকবে পরেরদিন প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে রোহিতের লড়াকু ৫০ এবং রুদ্রপ্রতাপ সিংয়ের বিধ্বংসী স্পেল(৪/১৩)। কিংবা সেমিফাইনালে যুবির আরো একবার ক্যাঙারু সংহার। সেদিন ব্রেটলিকে ফ্লিক করে স্কোয়ার লেগ স্ট্যান্ডে পাঠান যুবি। তাঁর ৩০ বলে ৭০ রানের কচকচি মনে রাখবেন পরিসংখ্যানবিদরা। সাধারণ মানুষের চোখে ওই ফ্লিক ইমেজারি হয়ে গিয়েছে।
সব মিলিয়েই ওয়ান্ডার্সে পদার্পণ। ২৪ সেপ্টেম্বর সামনে আবার সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। এ অবস্থায় কাকে দরকার?
যাঁকে দরকার, ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন সেই গম্ভীরই। অবশ্য গুল-তনভীরদের সামনে তাঁর ৫৪ বলে ৭৫ ও হয়তো কাজে আসে না, যদি শেষ বাজারে রোহিত ১৫৭/৫ য়ে পৌঁছে দেন ‘মেন ইন ব্লু’কে। ১৬ বলে ৩০ অপরাজিত ছিলেন হিটম্যান। কিন্তু এটি তাঁর পরবর্তী সেঞ্চুরি/ডাবল সেঞ্চুরির থেকে কোনও অংশে কম নয়। বরং খানিক এগিয়েই রাখবেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেটের উত্থানের পিছনে নিজেদের দেখছেন রামিজ
অতঃপর “দ্য ইরফান পাঠান শো”। নাহ্ একটু ভুল হল। একা ইরফান নয়— আরপি দোসর। শ্রীশন্থ-হরভজন নিয়মিত ব্যবধানে মার খেয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সামনে একা কুম্ভ হয়ে দুর্গরক্ষা করে যান মিসবাহ উল হক। তবু ইরফান-আরপির সৌজন্যে প্রতিবেশীদের ৫ রান দূরে থামিয়ে দেয় ধোনির দল। এখানেই তো সেই মিথ হয়ে যাওয়া কোট— “In the air… Sreesanth takes it…”
আবার সেই রবি শাস্ত্রী। যাকে কিছুক্ষণ বাদেই পুরস্কার বিতরণী সভায় গিয়ে ক্যাপ্টেন কুল বলবেন, “তোমাকে কিন্তু আমরা ভুল প্রমাণিত করলাম। তুমি বলেছিলে আমরা ফেভারিট নই।” দ্রাবিড়ের ফেলে যাওয়া ব্যাটন চট করে কেউ নিতে চায়নি। অগত্যা ধোনিকেই গছিয়ে দেওয়া হয়। এ কথা তাঁর মুখে না হলে আর কার মুখেই বা মানাবে?
আজ সেই ২৪ সেপ্টেম্বর। আজ ভারতীয় ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেরা রূপকথা রচনার দিন। আজ অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার দিন।