কলকাতা: এতদিন তিনি গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করতেন, এবার সেই অভিযোগেই তাঁকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলল নির্বাচন কমিশন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক লাইনে ভোট চাওয়ার অভিযোগ এনে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন৷ যদিও বিষয়টি নিয়ে এদিন রাত পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রী বা দলের তরফে পাল্টা কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷
আরও পড়ুন: west bengal assembly election 2021 কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্যের কৈফিয়ৎ চাইল কমিশন
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কমিশনের কৈফিয়তের আদৌ কি কোনও জবাব দেবেন তৃণমূল নেত্রী নাকি আরও সুর চড়াবেন৷ কারণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ভোটে কমিশনের বিরুদ্ধেও একাধিকবার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ কখনও বা কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে এক বন্ধনীতে রেখে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করার অভিযোগে সরব হয়েছেন৷ বাকি এখনও পাঁচ দফা ভোট৷ স্বভাবতই, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে মমতাকে কমিশনের পাঠানো তলবি নোটিসের বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা৷
প্রসঙ্গত, হুগলির তারকেশ্বরের সভা থেকে মুসলিমদের একজোট হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী৷ বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের উপরে কি ধরণের অত্যাচার নামিয়ে আনবে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন তিনি৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভি।তারপরই নড়ে চড়ে বসেছে কমিশন৷
কমিশন সূত্রের খবর: নোটিসে তৃণমূল নেত্রীকে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে, ধর্ম বা জাতের ভিত্তিকে কখনও ভোট চাওয়া যায় না। মন্দির বা মসজিদের কাছে ভোটের আবেদনও করা যায় না। কিন্তু তারকেশ্বরের সভায় আপনি কার্যত সেকথা বলে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। কমিশনের একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বয়ান থেকে স্পষ্ট তিনি শুধু নির্বাচনী বিধি নয়, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) এবং ৩(এ) ধারাও লঙ্ঘিত করেছেন৷ এবিষয়েই কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছে৷
প্রসঙ্গত, বাংলার ভোটে বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছেন বলে বারংবার অভিযোগ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নন্দীগ্রামে এবিষয়ে তাঁকে সবচেয়ে বেশি সরব হতে দেখা গিয়েছিল৷ পাল্টা হিসেবে শুধু বিজেপি নয়, মমতার বিরুদ্ধেই বাংলার রাজনীতিতে মেরুকরণের অভিযোগে সরব হয়েছেন বাকি বিরোধীরা৷ ইমামদের ভাতা চালু করে কিংবা ঘোমটা দিয়ে নমাজ পড়ে বাংলায় সম্প্রদায়ের মধ্যে মমতাই ভাগাভাগির রাজনীতির সূত্রপাত ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকি৷
এমনকি সম্প্রতি কোচবিহারের জনসভা থেকে এবিষয়ে তৃণমূল নেত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও৷ যদিও তারপরেও নিজের বক্তব্যে অনড় থাকতেই দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে৷ ফলে কমিশনের তলবি চিঠির জবাবে তিনি এখন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনীতির কারবারিরা৷ কারণ, ভোট ‘খেলা’র এখনও পাঁচ দফা বাকি যে!